এটম এর থেকেও কোটি গুন ছোট কি আছে????

এটম এর থেকেও কোটি গুন ছোট কি আছে

যখনই আমরা আমাদের ইউনিভার্স কে বোঝার চেষ্টা করি। তখনই আমাদের মনে একটি প্রশ্ন আসে। আর সেটা হলো এই ইউনিভার্সের বিল্ডিং ব্লকস কি। অর্থাৎ, আমাদের এই ইউনিভার্স কি দিয়ে তৈরি হয়েছে? এই ভাবনা টা শুধু আজকের ভাবনা নয়।

এটম থিওরির জন্ম

চারশত বছর পূর্বে একজন গ্রিক বিজ্ঞানী ফল খেতে খেতে এটা ভাবতে শুরু করেন যে, এই ফল কিভাবে তৈরি হলো? এটা কি অবশ্যই ছোট ছোট টুকরো অংশ জুড়ে তৈরি করা হয়েছে। সে তার এই ধারণা নিয়ে সমস্ত কিছু কে দেখতে থাকেন। এবং তিনি বলেন এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্স কিছু ছোট ছোট টুকরো দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। আর সেই ছোট ছোট টুকরো গুলো এতটাই ছোট যে, এর থেকে ছোট কোন কিছু হতে পারে না। এই টুকরো কে তিনি এটম নাম দেন। আর এই মহান বিজ্ঞানীর নাম ছিল ডেমোক্রিটাস। এটমের থিওরির জন্ম এটাকেই মনে করা হয়।

বিজ্ঞানী জন ডাল্টন এর মতবাদ

ডেমোক্রিটাসের এটমের থিওরিতে কিছু মিসিং ছিল। কিন্তু ব্যবহারিক দৃষ্টিতে এটার যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। যার কারণে দেড় হাজার বছর পর, বিজ্ঞানী জন ডাল্টন ডেমোক্রিটাসের এই এটমের থিওরি টি সবার সামনে তুলে ধরেন। ডালটন মনে করতেন, সব বস্তুই এটমের থেকে তৈরি হয়েছে। এবং এটা বস্তুর সবথেকে ছোট রূপ। যেটাকে আমরা আর বিভাজিত করতে পারবোনা। এটা এটম হয়ে থাকে, যার কারণে আমরা সব বস্তুকে বাস্তবে দেখতে পারি। এইভাবে একটি বস্তুর নির্মাণে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন এটমের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, একটি এটমের ভিতরের 99.999996 পার্সেন্ট অংশই খালি থাকে।

আমরা তো ইউনিভার্সের বিশালতাকে দেখেছি। কিন্তু আপনি আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে এটমের ভিতরের বিশাল এবং রহস্যময় দুনিয়া দেখে সত্যিই অনেক অবাক হয়ে যাবেন।

এটম বিভাজন

ডাল্টনের দেয়া এই এটমের থিওরি কেই বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক বছর মেনেছেন। কিন্তু বিজ্ঞান যতই আধুনিক হয়েছে, এটমকে নিয়ে ততই রিসার্চ বাড়তে থাকে। আর যখন লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার  (Large Hadron Collider) এ দুটি এটম কে আলোর গতির কাছাকাছি গতি দিয়ে সংঘর্ষ করা হয়, তখন এটম বিভাজিত হয়ে যায়। আর তা থেকে তিনটি অ্যালিম্যান্ট্রি পার্টিক্যাল নির্ণয় করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, প্রতিটি এটম এর ভিতরে তিনটি পার্টিক্যাল আছে। যাদের কে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন বলা হয়ে থাকে। যেখানে ইলেকট্রন নেগাটিভ চার্জ পার্টিক্যাল। যেটা পরমাণু মানে এটমের নিউক্লিয়াস, যাকে এটমের কেন্দ্র বলা হয়ে থাকে সেটার পরিক্রমা করে। এবং প্রোটন ও নিউট্রন ঐ ইলেক্ট্রনের ভিতর থেকে ঐ এটমকে স্থির অবস্থায় রাখে। প্রটন যেখানে পজিটিভ চার্জ পার্টিকেল সেখানে নিউটনের কোন চার্জ নেই। এখানে এটি একটি নিউট্রাল পার্টিকেল।

বিভাজিত পার্টিকেলের আকার

কিন্তু এই অ্যালিম্যান্ট্রি পার্টিকেলের খোঁজ হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানীদের একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাস্তবে এই তিনটি পার্টিকেল এতোটাই ক্ষুদ্র যে, এদের কে দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। যেকোনো বস্তুকে তখনই দেখতে পাওয়া সম্ভব। যখন আলো ওই বস্তুর উপর পরে প্রতিসারিত হয়ে আমার চোখে এসে পড়বে। এবং আমাদের চোখ আমাদের ব্রেনের সাথে প্রসেস করবে। আর তখনই আমরা ওই বস্তুকে বাস্তবে দেখতে পারবো। আর আমরা যে বস্তুকে দেখতে পারবো, সেটাকে আমরা অতি সহজেই অধ্যায়ন করতে পারব। কিন্তু যেহেতু এই তিনটি পার্টিকেল অতিক্ষুদ্র। তাই এই তিনটি পার্টিকেল কে ইলেকট্রিক ম্যাগনেটিক তরজ্ঞ ছুতে পারে না। কারণ ইলেকট্রিক ম্যাগনেটিক ওয়েভও এই পার্টিক্যাল এর আকারের থেকে অনেক গুনে বিশাল।

কিন্তু এটার একটি সমাধান আছে। এর জন্য ওইয়েভের ওইয়েভ লেংথ এতটাই কম করতে হবে যে,  যেন ঐ ওয়েভ ঐ পার্টিকেল কে ছুতে পারে। কিন্তু এখানেও একটি সমস্যা আছে। এটার ফলে ঐ ওয়েভের ভীতরে ভীষণ এনার্জির সৃষ্টি হবে।যা ঐ পার্টিকেল কে এলোমেলো করে দিবে। যার কারণে আমরা ঐ পার্টিকেলের সঠিক অনুমান বা সংখ্যা কখনোই পাবো না। এই বিষয় এতটাই গুরুত্বপুর্ণ যে, এটার একটি নামও রয়েছে। যেটাকে হাইজানবার্গ আনসার্টেইনটি প্রিসিপল (Heisenberg Uncertainty Priceiple) বলা  হয়ে থাকে।

হাইজানবার্গ আনসার্টেইনটি প্রিসিপল (Heisenberg Uncertainty Priceiple)

এটি এমন একটি বস্তু, যার অনুসারে আমাদের জন্য অ্যালিমেন্ট্রি পার্টিকেলের পরিমাপ করা অসম্ভব। যার কারনে হাইজানবার্গ আনসার্টেইনটি প্রিসিপল (Heisenberg Uncertainty Priceiple) কে কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর আধার বলা হয়ে থাকে। এখন আমরা যাব সাব এটমিক লেভেলের ঐ স্থানের দিকে। যেখানে আমরা আমাদের ইউনিভার্সের সব থেকে ছোট কনা থেকে শুরু করে একটি এটম এর দিকে যাব।

স্ট্রিং থিওরি (String Theory)

এর সাইজ হল 1.6×1033 মিটার… স্ট্রিং থিওরি সম্পর্কিত তথ্য আপনি অবশ্যই হয়তোবা শুনেছেন। যেটাতে বলা হয় এই ইউনিভার্স তৈরির প্রতিটি ব্যাপার যেগুলো বাস্তবতার অনুভব করায় সে বিষয় গুলো স্ট্রিং থিওরি থেকেই তৈরি হয়েছে। এটাকে ইউনিভার্সের সবথেকে ছোট বস্তু বলা হয়ে থাকে। এটার আকার একটি এটম এর থেকেও কয়েক ট্রিলিয়ন গুন অধিক ছোট। এই থিওরি টি গণিতের নিয়ম অনুসারে কাজ করে। এই ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু মজুদ আছে, সেগুলো বারোটি বেসিক বিল্ডিং ব্লক দ্বারা তৈরি। যার মধ্যে ৬ ধরনের কোয়াকস আছে। যা থেকে প্রোটন ও নিউট্রনের নির্মাণ হয়। আর অবশিষ্ট ছয়টা থেকে ল্যাপটোজ হয়ে থাকে। যার থেকে ইলেকট্রনের নির্মাণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই বারোটি বিল্ডিং ব্লকস মিলে পারমানবিক ৩ মানে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের নির্মাণ করে। যার থেকে এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্স তৈরি।

এছাড়াও এই ইউনিভার্সে চার ধরনের ফোর্স রয়েছে। যেমন:

ইলেকট্রম্যাগনেটিজম (Electromagnetism)
উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স (Wick Nuclear Force)
স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স (Strong Nuclear Force)
গ্রাভিটিশনাল ফোর্স (Gravitational Force)

এদের মধ্যে প্রথম তিনটি ফোর্সকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অফ পার্টিক্যাল ফিজিক্স এর সাহায্যে অধ্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু গ্রাভিটিশনাল ফোর্স (Gravitational Force) কে এই মডেল এর সাহায্যে অধ্যায়ন করা অসম্ভব। কারণ এইটা আমাদের গণিতের ক্যালকুলেশন এর মধ্যে সঠিকভাবে ফিট হয় না। কিন্তু আমরা এটা সবাই জানি, গ্রাভিটি কে ছাড়া আমরা আমাদের এই ব্রম্মান্ড কে কল্পনা করতে পারিনা । কিন্তু গ্রাভিটি কে পার্টিকেল বোঝানো শুধুমাত্র কঠিন নয়। বরং একটি ভীষন অসম্ভব বিষয়। এর জন্য বিজ্ঞানীরা স্ট্রিং থিওরি সিদ্ধান্ত সামনে আনেন। এই থিউরি এইজন্যই কার্যকর যে, কারণ এ থিওরি সব অ্যালিমেন্ট্রি পার্টিকেল সম্বন্ধে সব কিছু বোঝাতে সক্ষম। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা তো এটাই যে, এর মধ্যে এখন গ্রাভিটি ও শামিল হয়েছে। যার ফলে এখন ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত রহস্য প্রায় বোঝানো সম্ভব।

দা প্লাঙ্ক পার্টিকেল (The Planck Particle)

এর সাইজ হল 1.616255(18)×10−35 …. স্ট্রিং সবথেকে ছোট বস্তু। কিন্তু এটা একজিস্ট করে কি না,  সেটা এখনও রিসার্চের বিষয়। কিন্তু প্লাঙ্ক পার্টিকেল হল ব্রহ্মান্ডের সবথেকে ছোট পাটিকেল। তবে রহস্যের ব্যাপার হল, এটাও একটি হাইপোথিসিস। এটা এতটাই ছোট যে, লাইটের ওয়েভও এটাকে স্পর্শ করতে পারে না। যার কারণে এটাকে দেখতে পাওয়া অসম্ভব। প্লাংক পার্টিকেল কে ছোট ব্ল্যাক হোলও বলা হয়ে থাকে। কারণ এর ওয়েভ লেংথ। মানে এইটা লম্বায় নিজের শর্ট চাল্‌টস রেডিয়াসের সমান হয়ে থাকে। যেটা নিজে একটি প্লাংক লেন্থের সমান হয়ে থাকে। এই প্লাংক লেংথ হল ব্রম্মান্ডের সবথেকে ছোট লেংথ। যেটা একটি পরমাণুর থেকেও ১০ হাজার ট্রিলিয়ন গুণ অধিক ছোট। এটাকে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের সিঙ্গুলারিটির সাথেও তুলনা করে থাকেন।

ইলেকট্রন নিউট্রিয়ন ল্যাপটন্‌স (Electron Neutrion Leptons)

সাইজ হল 1.0×10−24 মিটার.. ভিডিও এর প্রথমে আমরা যে 12 টি বেসিক বিল্ডিং ব্লক্‌স এর কথা আলোচনা করেছিলাম, যা থেকে এই ইউনিভার্স এর সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে ছোট হচ্ছে ইলেকট্রন।এর আকার খুবই ক্ষুদ্র। কিন্তু ইলেকট্রন প্লাংক পার্টিকেলের থেকেও ট্রিলিয়ন গুণ অধিক বড়।

কোয়ার্ক্‌স (Quarks)

এই কোয়ার্ক্‌স এর সাইজ হল 1.0×10−22 মিটার। কোয়ার্ক্‌স ও পার্টিক্যাল লেভেলে হল 12 টি বেসিক বিল্ডিং ব্লক্‌স এর একটি অংশ। যার দ্বারা প্রোটন আর ইলেকট্রন তৈরি হয়। এটার আকার ইলেকট্রনের থেকেও ১০০ গুন বেশি। কিন্তু এটা এখনও এটমের থেকে ওয়ান ট্রিলিয়ন গুণ অধিক ছোট।

ফোটন্‌স (Photons)

সাইজ 1.0×10−19 মিটার… ফোটন্স এটমের অ্যালিমেন্ট্রি পার্টিকেল বলা হয়ে থাকে। এটা থেকে ইলেকট্রনিক ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বের হয়ে থাকে। ফোটন্স ১২ এর মত ব্যাবহার দেখিয়ে থাকে। যার ফলে এটা পার্টিকেল আর ওয়েব দুটি ভাবে একজিস্ট হয়ে থাকে।

ইলেকট্রন্‌স অ্যান্ড হিগ্‌স বসন্স (Electrons and Higgs Bosons)

যার সাইজ 1.0×10−18 মিটার To 1.2×10−17 মিটার হয়ে থাকে। ইলেকট্রন্‌স এটমের তিনটি অ্যালিমেন্ট্রি প্রাকটিক্যাল এর মধ্যে একটি। যেটার আকার একটি এটমের তুলনার থেকে 10 কোটি গুণ অধিক ছোট হয়ে থাকে। একই ভাবে হিগ্‌স বসন্স আর অন্যসব বসন্স যা মেটালে ম্যাচের জন্য রেসপন্সিবল হয়ে থাকে। সেটাও ইলেকট্রনের আকারের সমান হয়ে থাকে।

প্রোটন এবং নিউট্রন (Proton and Neutron)

এদের সাইজ 8.4×10−16 মিটার… প্রোটন এবং নিউট্রন হল অ্যালিমেন্ট্রি পার্টিকেল। প্রোটন পজিটিভ চার্জ বহন করে। কিন্তু নিউট্রন কোন চারজ বহন করে না। মানে এর কোন চার্জ নেই। কিন্তু দুটি পার্টিকেলের সাইজ একই সমান। এই দুটি মিলেই অ্যাটোমিক নিউক্লিয়াস কে তৈরি করে থাকে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, অ্যাটোমিক নিউক্লিয়াস ও এটম এর থেকে অনেক গুন ছোট হয়ে থাকে। এটাও এটমের থেকে এক লক্ষ গুণ অধিক ছোট।

এটম (Atom)

এটা থেকেই ইউনিভার্সের সব কিছু নির্মাণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আপনি এটমের ভিতরের দুনিয়ার পার্টিকেল আর লেংথ এর সম্পর্কে জানলেন। এটমের সাইজ হল 1.0×10−10 মিটার.। মানে আপনি 1 মিটারের একটি লাইনে, টেন বিলিয়ান এটম কে সাজিয়ে রাখতে পারবেন। এটার লেংথ খুবই কম। আর যখনই আমরা এটাকে, এটার ভিতরে থাকা সাপ এটোমিক পার্টিকেলের সাথে এটার তুলনা করবো তখন একটি এটম একটি ইউনিভার্সের সমান মনে হয়ে থাকে। এতটা রিসার্চ হওইয়ার পরেও, বিজ্ঞানীরা এই এটমের সম্পর্কে খুবই কম তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।

কোয়ান্টাম লেভেলের এত থিউরি আসার পরেও, আমরা ইলেকট্রনের ম্যাচের ন্যাচার সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হইনি। তবে এইটা ঠিক যে, ভবিষ্যতের বিজ্ঞান আমাদের থেকে আরও অ্যাড্‌ভান্স্‌ হবে। আর আমরা এই সমস্ত পার্টিক্যালের ব্যবহারের সম্পর্কে আরও অনেক তথ্যকে জানতে পারবো। যার সাহায্যে আমরা, ইউনিভার্সের আরও সব অজানা তথ্য গুলোকে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারব।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More