ওসিডি রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ওসিডি রোগের চিকিৎসা

আমরা এর আগে আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি ওসিডি রোগ কি এবং এই রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে। আজ আমরা আপনাদের জানিয়ে দেবো শুচিবায়ু ওসিডি রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত। পৃথিবীতে এমন কোন রোগ নেই যে, তার চিকিৎসা এবং ঔষধ নেই। তেমনি মানসিক এই শুচিবায়ু রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ রয়েছে। তবে এটি খুবই জটিল মানসিক রোগ।

শুচিবায়ু বা ওসিডি রোগের লক্ষণ

শুচিবায়ু ওসিডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তারা একটি কাজ কে নিয়ে বারবার চিন্তা করে। আর যে কাজ টা করে তা নিখুঁত এবং সুবিন্যাস্ত ভাবে করতে চায়। তারা অর্থহীন সব আজে বাজে চিন্তাভাবনা করতে থাকে। এমনি কিছু লক্ষণ যদি আশে পাশে কারো মাঝে পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চিত যে, তিনি মানসিক রোগ ওসিডি তে আক্রান্ত হয়েছেন। তাহলে চলুন বন্ধুরা শুরু করা যাক ওসিডি রোগের চিকিৎসা এবং শুচিবায়ু ওসিডি রোগের ঔষধ আছে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

শুচিবায়ু বা ওসিডি রোগের চিকিৎসা

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওসিডি রোগের কম বেশি অনেক সমস্যা দেখা যায়। তবে এই রোগে আক্রান্তদের মাঝে দুই টি ব্যপার কাজ করে। একটি হচ্ছে অবসেশন (Obsession) এবং অন্যটি কম্পালশন (Compulsion)।

অবসেশন (Obsession)

ওসিডি রোগ এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা বুঝতে পারে না, সে কি কাজ করছে আর কেন করছে। অনেকের আবার মনে হয় শরীরে নোংরা বা জিবাণু লেগে আছে। কোন কাজ ঠিকমত হয়েছে কিনা তা নিয়ে তাদের সন্দেহ থাকে। তারা শুধু জানে কাজ টি ভালো ভাবে করতে হবে। যা অবসেশন এর রূপ নেয়।

কম্পালশন (Compulsion)

আর কম্পালশন হচ্ছে এক ধরনের অদৃশ্য শক্তি যা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওসিডি রোগের ব্যক্তিরা একটি নিদিষ্ট অনুভূতিতে সাড়া দিয়ে থাকে। তারা যে কোন কাজ করেও মনে করে করেছি কিনা। অনেকের আবার পছন্দমত কাজ গুছিয়ে না রাখা পর্যন্ত স্বস্তি লাগে না। অনেকের আবার জোড় সংখ্যক কাজ না করলে ভালো লাগে না। যেমন, গোসলের সময় জোড়া সংখ্যক বার পানি শরীরে না দিলে, ঠাকুর বা দেবতার ছবি দেখলে খারাপ চিন্তা মাথায় আসে, যা শত চেষ্টার পরেও আটকাতে পারে না ইত্যাদি। এটি এক ধরনের কম্পালশন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে শুচিবায়ু রোগের মধ্যে উপরে উল্লেখিত সমস্যা গুলোর একটি যদি টানা কারো দুই সপ্তাহের বেশি হয়। তাহলে ধরা হবে তিনি ওসিডি রোগ এ আক্রান্ত। এই ওসিডি রোগের কারনে কেউ যদি দিনে এক ঘন্টার বেশি সময় নষ্ট করে তাহলে তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে রোগীর মন খারাপ থাকে বা ‘ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার’ দেখা দেয়। এ ছাড়াও দেখা দিতে পারে, উদ্বিগ্নতার সমস্যা, ফোবিয়া, প্যানিক ডিসঅর্ডার, টিক ডিসঅর্ডার ইত্যাদি সমস্যা। নিচে ওসিডি রোগের চিকিৎসা কয় ভাবে করা যায় তা তুলে ধরা হলো।

ওসিডি রোগের চিকিৎসা দুই ভাবে করা যায়

১। সাইকোলজিক্যাল
২। সামাজিক

- Advertisements -

সাইকোলজিক্যাল ভাবে ওসিডি রোগের চিকিৎসা

শুচিবায়ু বা ওসিডি রোগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের চিকিৎসা একসাথে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা শুচিবায়ু রোগের মধ্যে ‘কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি’ খুবই উপকারী। এখানে রোগীর ভুল চিন্তা গুলোর উপর কাজ করা হয়। বিশেষ করে নেগেটিভ থট, কোর বিলিভ এগুলির পূণ র্গঠন করার চেষ্টা করা হয়। সাইকোলজিক্যাল ভাবে ওসিডি রোগের চিকিৎসা প্রয়োগ করলে, রোগী ময়লায় বা দাগে হাত দেবে কিন্তু হাত ধুবে না।

সামাজিক ভাবে ওসিডি রোগের চিকিৎসা

ওসিডি রোগের চিকিৎসা সামাজিক ভাবেও দেওয়া যায়। তবে এই চিকিৎসা রোগীর বয়স যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুসারে একটু কম চাপের যে কোন পেশায় আত্মনিয়োগ করানো ভালো। এছাড়াও বৈদ্যতিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওসিডি রোগের চিকিৎসা নিজে নিজে গ্রহন করা বিপজ্জনক।

উপরে উল্লেখিত আলোচনা টি ছিল ওসিডি রোগের চিকিৎসা আর এখন আমরা আলোচনা করবো ওসিডি রোগের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আর আপনারা ধারাবাহিক ভাবে পড়তে থাকুন আর জেনে নিন ওসিডি রোগের ঔষধ সম্পর্কে পূর্ণাজ্ঞ তথ্য।

শুচিবায়ু ওসিডি রোগের ঔষধ

ওসিডি রোগের ফার্মাকোলজিক্যাল থেরাপি বা ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা। প্রবাদ আছে, কথায় চিড়া ভিজে না। এমনও অনেক রোগী আছে যারা কিছু মেডিসিন প্রত্যাশা করে। বাস্তবিক ভাবেই কিছু অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওসিডি রোগীদের খুব কাজে আসে। ওসিডি রোগীদের এক সাথে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এবং ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার থাকতে পারে।

বিশেষ করে চিকিৎসা তে ফ্লোক্সেটিন, সারট্রালিন, সিটালোপ্রাম, অ্যাসিটোপ্রোলামিন, ফ্লোভোক্সেমিন অত্যন্ত কার্যকর ঔষধ ওসিডি রোগের জন্য। নিচে ওসিডি রোগের কিছু ঔষধ এর নাম দেওয়া হলো।

সাধারনত চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওসিডি বা শুচিবায়ু রোগের যে ঔষধ গুলো ব্যবহার করা হয় তা হলো-

  • ফ্লোক্সেটিন
  • সেরট্রালিন
  • প্যারোক্সেটিন
  • ফ্লোভোক্সামিন
  • ক্লোমিপ্রামিন
  • সিটালোপ্রাম
  • এসসিটালোপ্রাম
  • ভেনলাফ্যাক্সিন

উপরে উল্লেখিত ঔষধ গুলো ওসিডি রোগের জন্য সেবন যোগ্য। আর এই গুলো ওসিডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডোজ হিসাবে দেওয়া হয়। তাই এই ঔষধ গুলো সেবন করার আগে আপনি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

বন্ধুরা, এই ছিল ওসিডি রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আপনি ওসিডি রোগের চিকিৎসা এবং ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তবে ওসিডি রোগের ঔষধ এবং থেরাপি এক সাথে করলে সব থেকে ভালো হয়।

আপনি আরো পড়তে পারেন, মানসিক রোগ ওসিডি কি এবং এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। ধন্যবাদ

- Advertisements -

You might also like