করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করে দিল মেরুদণ্ডহীন!!!
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস অর্থনীতিকে মেরুদণ্ডহীন করে দিল
- Advertisements -
অর্থনীতি কোন একটি দেশের উন্নতির চালিকাশক্তি। সেই চালিকাশক্তি মাঝে মাঝে কোন কোন প্রতিবন্ধকতায় থেমে যায়। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে থেমে গেছে। তার পেছনে রয়েছে করোনাভাইরাস। আমাদের দেশের অর্থনীতিও থমকে গেছে।শুধু তাই নয় করনা ভাইরাসের প্রকোপে দেশের অর্থনীতিকে বলা চলে মেরুদণ্ডহীন। কবে নাগাদ আবার দেশের অর্থনীতির পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে তা নিয়ে সন্দিহান সবাই।
করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা কত হতে পারে তা নিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যে বিশ্লেষণ করেছিল তাতে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার ১ দশমিক ১ শতাংশ কমবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও তখন করোনার প্রকোপ আরো কম ছিল। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা আর প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
এডিবির এ আশঙ্কা সত্য হলে বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাবে। কারণ তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। আর সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
- Advertisements -
এডিবির এ শঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের অর্থমন্ত্রীকেও। তিনিও করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক আঘাতের আশঙ্কার কথা বলছেন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউনের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা কমছে। ফলে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোয়।
- Advertisements -
বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙা করে রাখে, কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এতে রেমিট্যান্সের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন। ফলে এ ধাক্কাটা সামলাতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এদিকে করোনা কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি তার একটি প্রমাণ মেলে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনেও। সংস্থাটির করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫টি দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে।
‘গ্লোবাল ট্রেড ইম্প্যাক্ট অব দ্য করোনা ভাইরাস এপিডেমিক’ শিরোনামে ওই গবেষণা প্রতিবেদনটিতে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্প খাত, কাঠ ও আসবাব শিল্প এবং চামড়াশিল্পে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের অর্থনীতি শ্লথ হওয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে চামড়াশিল্পে। এই শিল্পে ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বস্ত্র ও আসবাবপত্র শিল্পে এক মিলিয়ন ডলার করে ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসি,বি) সভাপতি মাহবুবুর রহমানও বলেন, করোনা ভাইরাস নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আঘাত। এটি বিগত বিশ্বমন্দাকে ছেড়ে যাবে। তবে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি যেহেতু প্রতিদিন বাড়ছে, অর্থনৈতিক অনুমানগুলো কেবল এর প্রভাবের মাত্রা জানাতে পারবে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী কী ক্ষতি হবে এখনই তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করবে এর শাখাপ্রশাখা বিস্তারের পরিধি। সেটা পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে নীতিনির্ধারকরা কীভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করবে অন্য সবকিছু। তবে সে ধাক্কাটা খুবই বড় হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
- Advertisements -