খোঁজ পাওয়া গেল পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের

খোঁজ পাওয়া গেল পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের

এমনটা বলা কোন প্রকার ভুল হবে না যে, আমাদের এই পৃথিবী নিজেই একটি রহস্যের ভান্ডার। কিছু রহস্যের উন্মোচন আমাদের এই বিজ্ঞানীরা করতে পারলেও। এমন অনেক রহস্য রয়েছে যেগুলোর উত্তর এখনো আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানের কাছে নেই। আর এমন একটি অদ্ভুত রহস্যময় বস্তুর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। যেটা ২০০০ বছর পূর্বের তৈরি।

১৭ ই মে ১৯০২ সাল। যখন কিছু ডুবুরী দল গ্রিক আইল্যান্ড এর এন্টিক সমুদ্রে ডুব দেন। এবং সেখানে একটি ডুবন্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এটা একটি রোমান জাহাজ ছিল। যেটা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এই জাহাজটিতে বিভিন্ন ধরনের কলা আকৃতি আর খাজানাতে ভরপুর ছিল। যেগুলো রোমানরা গ্রিক থেকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল।

এন্টিক্যাথেরা মেকানিজম

এই জাহাজ থেকে যা কিছু পাওয়া যাচ্ছিল, তার সবকিছুতে প্রাচীন কালের নিদর্শন ছিল। কিন্তু ডুবুরিরা এসব প্রাচীনকালের নিদর্শন ছাড়াও একটি রহস্যময় বক্স পেয়েছিল। আর ঐ রহস্যময় বক্সের ভিতরে ছিল এমন একটি মেশিন, যেটা আমাদের প্রাচীন ইতিহাসকে নিয়ে করা সকল ধারণাকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল। এটা ছিল ব্রোঞ্জ দ্বারা তৈরি একটি ছোট্ট মেশিন। যেটার নাম দেয়া হয়েছিল এন্টিক্যাথেরা মেকানিজম। আর আর্কিওলজিস্ট দের মত অনুসারে, এটা দুই হাজার বছরেরও অধিক পুরনো ছিল।

কিন্তু এর মধ্যে এমন কি ইনফরমেশন আছে যে, যার কারণে এটাকে নিয়ে লিখতেছি। এটা হচ্ছে একটি প্রাচীন কম্পিউটার। এই কম্পিউটার ২০০০ বছর আগে তৈরি। এটা এমন একটি ম্যাশিন যেটার মধ্যে অনেক গুলো গিয়ার্‌স আর সুইচের ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এটাকে আজ থেকে প্রায় ২১০০ বছর পূর্বে,  অজানা কোন গ্রীক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিল।

রহস্য উদঘাটন

যখন বিজ্ঞানীরা এই ম্যাশিনটি সম্পর্কে জানতে পারল, তখন তারা অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিল। আর তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা এটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে এবং তারা ভাবতে শুরু করে যে, এটা কোথা থেকে এসেছে। এই ম্যাশিনটি কে বানিয়েছে। আর এই ম্যাশিন টি কি কাজে ব্যবহার করা হত।

১৯০২ সালে এই মেশিনটি পাওয়ার পর থেকেই অনেক বিজ্ঞানী এটা নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করে দেন। তারা এর রহস্য উদঘাটনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল।কিন্তু এটা সম্পর্কে কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এমনকি ১০০ বছর ধরে এই রহস্যময় মেশিনটি গ্রীকের রাজধানী এথেন্সে একটি নামি দামী মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করা হয়েছে। যার ফলে এটার রহস্য রহস্যই থেকে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে আজ থেকে প্রায় ২০ বছর পূর্বে আমাদের বিজ্ঞানীরা এতটাই আধুনিক হয়ে যায় যে, যার ফলে আমরা এই বস্তুটি সম্পর্কে অধ্যায়ন করতে পারি।

আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা

সারা বিশ্বের আলাদা আলাদা ফিল্ডের এক্সপার্ট, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিওলজিস্ট আর বিজ্ঞানের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এক্সপার্ট মিলে এই ম্যাশিনটির অধ্যায়ন শুরু করে। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা ছিল। যেহেতু এই ম্যাশিনটি অনেকটাই প্রাচীন ছিল, তাই এটাকে আলাদা আলাদা ভাবে বিভক্ত করা সম্ভব ছিল না। এর জন্য এটার ভিতরের ম্যাকানিজমকে দেখার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে ম্যাশিন এর দরকার ছিল। আর ঐ সময় এই ধরনের ম্যাশিন শুধু মাত্র ইংল্যান্ডেই ছিল। যেটা ইতিহাস থেকে অনেকটাই দূরে। আর এই ম্যাশিনটিকে ঐ পর্যন্ত সঠিকভাবে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। এর জন্য ঐ বিশাল ওজনের এক্স-রে ম্যাশিনকেই প্লেনের সাহায্যে এথেন্সে নিয়ে আসা হয়। আর তার পর এই এক্স-রে ম্যাশিনের সাহায্যে এই ম্যাশিনটির এক্স-রে রিপোর্ট বের করা হয়। তখন এই ম্যাশিনটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিটি বস্তুর ডিটেইল্‌স প্রতিটি প্রাচীন ইতিহাসবীদদের অবাক করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কারণ ঐ ম্যাশিনটির ভিতরে যে টেকনলোজির ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা আজ থেকে ২০০০ বছর পূর্বে তৈরি করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না।

এই ছোট্ট ম্যাশিনটির মধ্যে ৩৭ টি আলাদা আলাদা আকারের গিয়ার্‌স ছিল। যা তখন ও নিখুত ভাবে সঠিক স্থানে স্থাপন করা ছিল। এটা আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে তৈরি করা একটি প্রাচীন কম্পিউটার ছিল। এই কম্পিউটারকে যেই তৈরি করুক না কেন, সে ভীষন অ্যাডভান্সড ছিল।

কম্পিউটারের কাজ

এই এন্টিক কটিরা ম্যাকানিজম মুন ক্যালেন্ডারকে দেখাতো। মানে এতা একটি এমন ক্যালেন্ডার, যেটা আমাদের চাদকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল। এই ম্যাশিনটি সূর্য গ্রহন আর চন্দ্র গ্রহনকে প্রেডিকশন করতে পারত। সেটাও আবার সঠিক তারিখ ও সময় উল্লেখ্য করে। এমনকি চন্দ্র গ্রহন কি রঙ এর হবে, সেটাও এই ম্যাশিনটির সাহায্যে জানা যেত। এই ম্যাশিনটি তখনকার সময়ের তুলনায় অনেকটাই অ্যাডভান্সড ছিল।

এর পর এই ম্যাশিনটির একটি ডুপ্লিকেট তৈরি করা হয়। যার থেকে বোঝা যায়, এই ম্যাশিনটি গ্রীক অ্যাস্ট্রোনমাররা তৈরি করেছিল। কারণ ম্যাশিনটির মধ্যে যে সমস্ত কাটার ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো আমাদের সৌর মন্ডলের বিভিন্ন প্ল্যানেটকে বোঝানো হত। যেখানে সেন্টারে আমাদের পৃথিবী এবং চাদ সূর্য সহকারে সকল প্ল্যানেট আমাদের পৃথিবীর পরিক্রমা করছে। যেমনটা তখনকার সময়ের গ্রীক অ্যাস্ট্রোনমাররা মনে করতেন।

এই ক্যালেন্ডারটি চাদের সম্পর্কে তথ্য দিত। আর এতা এতটাই নিখুত ছিল যে, আপনি হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না। যেমনটা আমরা জানি, চাদ আমাদের পৃথিবীর একটি সার্কুলার অরবিটে নয় ইলিপ্টিক্যাল অরবিটে আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করছে। এর মানে, যখন চাদ আমাদের পৃথিবীর কাছে আসে তখন এটার গতি বেড়ে যায়। আর যখন দূরে চলে যায় তখন এটার গতি ধীরে হয়ে যায়। যদি এই ম্যাশিনটিকে চাদের  সার্কুলার অরবিটকে নির্ধারন করেই তৈরি করা হত, তাহলে এই ম্যাশিনটি ভুল ভবিষ্যত বাণী করত।

ম্যাশিনটির ভবিষ্যত বাণী

কিন্তু এটার আবিষ্কারক এটার মধ্যে থাকা গিয়ার্‌সকে এতটাই অধ্যায়ন করে তৈরি করেছিল যে, চাদের কক্ষ পথে হওয়া সামান্য পরিবর্তনকেও, সে সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে পারত।

সত্যিই এটা কি করে সম্ভব। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে এমন আধুনিক ম্যাশিন তখন কিভাবে তৈরি করতে পারে। আপনাদের জানার জন্য বলে দেই। পৃথিবীর প্রথম ম্যাকানিকাল ক্লকের খোজ ১৪০০ শতাব্দীর শুরু দিকে হয়েছিল। আর এই ঘড়ি টি একটি মাইক্রো গাড়ির সমান বড় ছিল। এখন ভাবুন, এই ঘড়ি টি তৈরি হবার ও ১৫০০ বছর পূর্বে এই অ্যান্টিকাইথেরা ম্যাকানিজম একটি ছোট্ট বাক্সের মত তৈরি করা হয়েছিল। যার মধ্যে থাকা গিয়ার্স তখনকার সময়ের থেকে অনেকটাই অ্যাডভান্সড আর কম্প্যাক্ট ছিল। যার কারণে বর্তমান বিজ্ঞান এখন ও এই ম্যাশিনটিকে নিয়ে অধ্যায়ন করে যাচ্ছে।

কিছু বিজ্ঞানী তো এটাও মনে করেন যে, এই ম্যাশিনটি কোন এলিয়েন টেকনোলজির হতে পারে। বন্ধুরা, আপনাদের কি মনে হয়? এটা কি এলিয়েন দ্বারা তৈরি করা কোন টেকনোলজি? নাকি আমাদের পৃথিবীর প্রাচীন কোন আধুনিক সভ্যতা এটাকে তৈরি করেছিল? সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More