খোঁজ হল শনিগ্রহের নতুন ২০ টি চাঁদের

শনিগ্রহের নতুন ২০ টি চাঁদের

আমাদের সোলার সিস্টেমে প্রায়ই নতুন নতুন বিষয় বস্তুর খোঁজ হয়ে থাকে। সোলার সিস্টেম আমাদের ইউনিভার্স এর একটি ছোট্ট অংশ। যেখানে আমাদের সূর্য এবং তার আটটি গ্রহ রয়েছে। আর যার মধ্যে আমাদের পৃথিবী এই পরিবারের ছোট একটি অংশ।

আমরা ইউনিভার্সেল লাখো লাইট ইয়ার্স দূরে যতই গ্রহের খোঁজ করি না কেন, সত্য তো এটাই যে, আমরা আমাদের সোলার সিস্টেম সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্যই জানতে পারিনি। এমনকি আমাদের পৃথিবীতেও অনেক অজানা ও অদ্ভুত কিছু রহস্য রয়েছে যা আমরা এখনো উম্মোচন করতে পারিনি।

বর্তমানে এমন একটি খোঁজ পাওয়া গেছে শনি গ্রহের সম্পর্কে। যেখানে আমরা শনি গ্রহের আরো ২০ টি নতুন চাঁদের খোঁজ পেয়েছি।

জুপিটার প্লানেট (Jupitar Planet)

আমাদের সোলার সিস্টেমের সবথেকে বেশি চাঁদের মালিক ছিল জুপিটার। যার চাঁদের সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৭৯ টি। এবং এই গ্রহের সবথেকে বড় চাঁদের নাম ছিল গ্যানিমিড। গ্যানিমিড আমাদের সৌরমণ্ডলের সবথেকে বড় উপগ্রহ। যেটা মারকিউরি প্লানেট ও প্লুটো প্লানেটের তুলনায় কিছুটা বড়। কিন্তু আমাদের মার্চের তুলনায় কিছুটা ছোট। যদি গ্যানিমেড আমাদের জুপিটার কে প্রদক্ষিণ না করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতো তাহলে এটি একটি গ্রহ হয়ে যেত। এটার ডায়ামিটার ৫২৫৮ কিলোমিটার।

অপরদিকে শনিগ্রহে যে সমস্ত চাঁদের খোঁজ করা হয়েছে তা অনেকটাই ছোট।

স্যাটার্ন প্লানেট (Saturn Planet)

আমাদের সৌরমণ্ডলের সূর্য থেকে ষষ্ঠ নাম্বার গ্রহ স্যাটার্ন। এবং আকারের তুলনায় জুপিটার এরপর আমাদের সৌরমণ্ডলের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস জায়ান্ট প্লানেট। এটার নাম রোমান দেবতা স্যারেটাইনের নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। আর হিন্দু দেবতার নাম অনুসারে এটার নামকরণ করা হয়েছে শনি গ্রহ। এটার রেডিয়াস ৫৮ হাজার ২৩২ কিলোমিটার। যেটা আমাদের পৃথিবীর তুলোনার চেয়ে নয় গুন বড়। আর ওজন ৫৫ টি পৃথিবীর ভরের সমান হবে। স্যাটার্ন তার চারপাশে থাকা বিশাল ডিক্সের জন্য জনপ্রিয় হয়েছে। যা তার চারপাশে থাকা আইস আর ডাচ পার্টিকেল। যেগুলো এই গ্রহটি অরবিট করছে। স্যাটার্ন এর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৯ বছর ৬ মাস। এখন পর্যন্ত আপনি যদি স্কুলের বই পড়ে থাকেন তাহলে স্যাটার্ন এর ৬২ টি চাঁদের কথা জানতে পারবেন।

কিন্তু নতুন আপডেট অনুযায়ী আপনি জেনে খুশি হবেন যে, স্যাটার্ন এর পরিবারে আরও ২০ টি নতুন চাঁদের সংখ্যা যোগ হয়েছে। যার ফলে স্যাটার্ন এর মোট চাঁদের সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে ৮২ টি হয়ে গেছে। এর ফলে স্যাটার্ন জুপিটার কে পিছনে ফেলে আমাদের সৌরমণ্ডলের সবথেকে এখন সর্বাধিক চাঁদের মালিক হয়ে গেছে। এই নতুন চাঁদের খোজের আপডেট ৭ অক্টোবর ২০১৯ এ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ইউনিয়নের মাইনর প্লানেট সেন্টার করেছে।

কার্নেগিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এর অ্যাস্ট্রোনমার স্কট শেফার্ড ও তার টিম এ খোজটি করেন। এবং এই মহত্বপুর্ন খোজটি করা হয় আমাদের পৃথিবীর মধ্যে স্থাপন করা হাওয়েরমাওয়ানাকিয়া সুবারু টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে।

সুবারু টেলিস্কোপ

বর্তমানের সবথেকে অ্যাডভান্স টেলিস্কোপ হচ্ছে সুবারু টেলিস্কোপ। এখন হয়তোবা আপনি ভাবছেন স্যাটার্ন এর রিসেন্ট খোজ পাওয়া এই সমস্ত চাঁদ কোথা থেকে আসলো? কারণ স্যাটার্ন এর চাঁদের খোঁজ তো অনেক পূর্বেই হয়েছিল। এই সমস্ত চাঁদ  পূর্বে স্যাটার্ন কে প্রদক্ষিণ করতো না? নাকি এগুলো স্যাটার্ন এর কক্ষে পরে প্রবেশ করে?

সত্যিকার অর্থে এর মূল কারণ হল স্যাটার্ন এর অন্যসব চাঁদের আকার। যেগুলো আকারে অনেকটাই বড়। যেমন স্যাটার্ন এর সব থেকে বড় চাঁদ হল টাইটান।

টাইটান চাঁদ

এইটা ভীষণ উজ্জ্বল একটি চাঁদ। এবং এর ডায়ামিটার ৫০০০ কিলোমিটার। কিন্তু নতুন খুঁজে পাওয়া চাঁদ গুলো ভীষণ ছোট। যেগুলোর ডায়ামিটার ৫ কিলোমিটার এর থেকেও কম হতে পারে। এই সমস্ত কারণে এইসব ছোট চাঁদকে ডিটেক্ট করা মোটেও সহজ কিছু নয়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী বড় বড় চাঁদের সংঘর্ষ থেকে এই সমস্ত চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে । যা এই গ্রহের নির্মাণের সময় হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বলা হচ্ছে, শনি গ্রহের নতুন খোজ পাওয়া ২০ টি চাঁদের মধ্যে 17 টি চাঁদ শনি গ্রহ কে বিপরীত দিক থেকে প্রদক্ষিণ করতেছে। আর বাকি তিনটি ঐ দিক থেকেই  শনিকে প্রদক্ষিণ করছে, যেদিকে শনি নিজে ঘুরছে

এই সমস্ত চাঁদ শনি থেকে এতটাই দূরে আছে যে, শনির একবার পরিক্রমন করতে ঐ সমস্ত চাঁদকে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। স্কট শেফার্ড এর মতে এই সমস্ত চাঁদ গ্রহের অবশেষের অংশ থেকে তৈরি হয়েছে। তাই এই সমস্ত চাঁদকে অধ্যায়ন করলে শনি গ্রহ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যাবে। শনির এই সমস্ত চাঁদের নামকরণ এখনো করা হয়নি। কার্নেগিয়ে ইনস্টিটিউশন এর নামকরণ করার জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। যার মাধ্যমে আপনিও এই সমস্ত চাঁদের নামকরণ করতে পারেন। তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকৃত ব্যাক্তিকে কিছু নাম প্রদান করবেন। তাদের ঐসব বাছাইকৃট নামের মধ্যে থেকে আপনাকে নাম বাছাই করে দিতে হবে।

আপনি যদি ঐ সমস্ত চাঁদের নামকরণ করতে চান, তাহলে নিচে দেয়া লিঙ্কের মাধ্যমে তাদের সাইটে গিয়ে নাম সিলেক্ট করে দিতে পারেন। এটা তো বলা যাবে না যে স্যাটার্ন এ আরো কোন নতুন চাঁদের খোজ পাওয়া যাবে আদৌ আছে কি নেই। সেটা ভবিষ্যতেই বলা সম্ভব হবে।

আশা করি আপনাদের কাছে এই নতুন আপডেট টি ভালো লেগেছে। আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More