করোনা লকডাউন এ গরিবের ইফতার

গল্প: করোনা লকডাউন এ গরিবের ইফতার

গল্প: করোনা লকডাউন এ গরিবের ইফতার
লেখা: Orpita oyshorjo

রহিম সাহেব বড়লোক মানুষ কোন কিছুরই তার অভাব নেই। আজ প্রথম রোজা তাই তার বাসায় হরেক রকমের ইফতারির সরঞ্জাম। যেন এক খুশির আমেজ।

আর তার পাশেই হাসান দের বাড়ি। ছোট একটা চালা ঘরে সে, তার মা আলেয়া বেগম আর তার বাবা রতন মিয়া থাকে। রতন মিয়া রিক্সা চালিয়ে যা রোজকার করে, তাই দিয়ে কোন রকম তাদের সংসার চলে যায়।

রহিম সাহেব এর ছেলে রাতুল আর হাসানের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। প্রতি দিনের মত আজও হাসান আর রাতুল , রাতুলদের উঠানে খেলা করছে। আর কিছুক্ষন পর আজান দিবে। রাতুল হাসানকে বলছে হাসান তুমি এখন বাড়ি যাও। আজ রোজা তাই মা আজ অনেক ইফতার তৈরি করেছে ।

হাসান এ কথা শুনে এক দৌড়ে বাড়িতে এসে তার মাকে ডাক দিলো।
মা, সন্ধ্যা তো হইয়া গেছে। আজানও দিয়া দিবো। আমাগোর ইফতারি কই?
উত্তরে মা বললেন, আজানের অহন মেলা সময় আছে। তোর আব্বা ইফতারি নিয়া অহনি আইয়া পরবো।
তুই হাত পা ধুয়ে আয়। হাসান হাসিমুখে হাত পা ধুতে চলে গেলো। হাত পা ধুয়ে এসে তার মা কে বললো,
“আব্বা তো সকালে কইয়া গেছে ইফতারি লইয়া আইবো। কই অহনও তো আইলো না।
উত্তরে মা বললেন, ” আইবো বাবা আইবো। তুই দেখবি তোর আব্বা এহনি ইফতারি লইয়া আইয়া পরছে।

রতন মিয়া সকালে ইফতারি নিয়ে আসবে বলে রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছে।
আজান দিবে কিন্তু এখনো আসার নাম নাই। আলেয়া বেগম তার স্বামীর জন্য অস্তির হয়ে পরেছে।
আলেয়া বেগম চেয়ে আছেন বড় রাস্তার দিকে। বড়জোর দশ মিনিট বাকি আছে আজানের।
মসজিদের আজান তাদের ঘর থেকে পরিষ্কার শুনা যায়।

করোনা লকডাউন এর দুর্যোগে ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় আলেয়া বেগমের খাবারের ব্যাবসা বন্ধ। তাই আজ তাদের ঘরে এতো অভাব। রাস্তাঘাটেও লোকজনের চলাফেরা নেই। রিকশা নিয়েও বের হতে ভয় পায় রতন। কিন্তু তিনটি পেটের তাগিদে তাকে সমস্ত ভয়কে পিছনে ফেলে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়। হাসান দেখে তার বাবা রিকশা নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। আনন্দে তার মুখে মন জয় করা হাসি। দৌড়ে গেলো বাবার কাছে।

“আব্বা ইফতারি আনছো?
“আনছি আব্বা।
এই নেও। (একটা প্যাকেট ছেলের হাতে দিয়ে) বলল্লো “আমি অযু কইরা আইতাছি। তুমি চকিতে গিয়া বহো?
হাসান বল্লো ” আইচ্ছা আব্বা তুমিও অযু কইরা আহো আমরা এক লগে ইফতার করুম । রতন মিয়া অযু করে এসে চকিতে বসার সাথে সাথে হাসান তার বাবা কে বলে, ” আব্বা যানো রাতুল এর বাড়িত আইজ অনেক ইফতার। আমাদেরও আইজ অনেক ইফতার হইবো তাই না আব্বা?
ছেলের কথা শুনে রতন মিয়া আর আলেয়া বেগম একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাহি করে।
হাসান প্যাকেট খুলে দেখে মুড়ির সাথে অল্প বুট আর কিছু বুন্দিয়া। হাসান তার বাবাকে বললো আর কিছু নাই?
আলেয়া বেগম সাথে সাথে উত্তর দিলেন, “দোকানে অহন আর কিছু পাওয়া যায় না বাজান।
হাসান বলে” রাতুলের ঘরে তো অনেক কিছু দেখছি।
আলেয়া বেগম বলে “তারা সকালে নিয়া আইছে। সকালে সব পাওয়া যায়।
বিকালে শুধু মুড়ি বুট আর বুন্দিয়া থাকে।

হাসান তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো ” কাল থাইকা সকালে নিয়া আইবা।

“আইচ্ছা, কাল থাইকা আমার হাসান বাবার লাইগ্যা সবার আগেই সবকিছু লইয়া আমু।
এই কথা বলার পর পর রতন মিয়া চকি থেকে পরে যায় হাসান আর তার মা আলেয়া বেগম ভয় পেয়ে যায়। তারা লক্ষ করে রতন মিয়ার শরীলে আঘাতের চিহ্ন। হাসান কিছু বুঝতে না পেরে তার বাবাকে জিঙ্গাস করে, ” আব্বা তোমার পিডে এগুলা কিসের দাগ “?

তার বাবা উওর দেয় ” কিছু না আব্বা রাস্তায় পইরা গেছিলাম “।
হাসান লক্ষ্য করে তার বাবার চোখের কোণায় পানি জমে আছে।
সে কিছুটা হয়তো বুঝে যায় তার পর সে তার বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে বলে, আব্বা আমার আর দামী ইফতার লাগবো না , তুমি আর বাইরে যাইও না
রতন মিয়া তার ছেলেকে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না করতে থাকে।  তাদের কান্না কেউ শুনছে না কারন আজ সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যাস্ত।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More