চাঁদের বুকে সুরক্ষিত আছে চন্দ্রযান ২ ও ল্যান্ডার বিক্রম
চাঁদের বুকে সুরক্ষিত আছে বিক্রম
চন্দ্রযান ২ এর চাঁদে ল্যান্ডিং
চন্দ্রযান ২ কে নিয়ে একটি ব্রেকিং নিউজ সবার সামনে এসেছে। ইসরো বিষয়টাকে অফিসিয়ালি কনফার্ম করেছেন। ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের সারফেসে ল্যান্ড করে গেছে। কিন্তু সেটা সফ্ট ল্যান্ডিং এর পরিবর্তে, কিছুটা হার্ড ল্যান্ডিং করেছে। যখন ৭ই সেপ্টেম্বর চাঁদের সারফেস থেকে মাত্র ২ দশমিক ১ কিলোমিটার উপরে থাকা অবস্থায় বিক্রম এর সাথে ইসরোর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন বিক্রম তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার করে চাঁদের ভূমিতে ল্যান্ড করে।
এটা ঠিক যে, গত কাল সারা দিন বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। এবং অনেকেই এটা নিয়ে ধারণা করেছেন যে, বিক্রম চাঁদের বুকে ক্রাশ ল্যান্ডিং করেছে। কিন্তু ইসরো এটা কনফার্ম করে যে, চন্দ্রযান ২ এর অরবিটার থেকে আসা থার্মাল ইমেজের থেকে পাওয়া তথ্য এটাই প্রকাশ করে যে, ল্যান্ডার চাঁদের বুকে কিছুটা কাত হয়ে ল্যান্ড করেছে। এবং ইসরো এটাও কনফার্ম করেছে যে, ল্যান্ডারটি ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ল্যান্ড করেছে। যেহেতু ল্যান্ডারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, সেহেতু ইসরো যদি পুনরায় কমিউনিকেশন স্থাপন করতে পারে, তাহলে বিক্রমের থার্স্টারকে একটিভ করে একে আবার সোজা করা যেতে পারে।
চাঁদের মাটিতে এক্সপেরিমেন্ট
কিন্তু বিক্রমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিক্রমের অ্যান্টেনা গ্রাউন্ড স্টেশন অথবা অরবিটারের দিকে হওয়া চাই। যেহেতু ল্যান্ডার টি দাঁড়িয়ে আছে, তাই আশা করা হচ্ছে ল্যান্ডর এর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এটার জন্য ইসরোর হাতে আর মাত্র ১১ দিন সময় আছে। কারণ বিক্রম ল্যান্ডার কে ১৪ দিন চাঁদের মাটিতে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যা চাঁদের একদিনের সমান। যেটাকে ওয়ান লুনার ডে বলা হয়ে থাকে। এরপর চাঁদের এই সাউথ কোন অন্ধকার হয়ে যাবে। এই অন্ধকার হওয়ার ফলে বিক্রম ল্যান্ডার তার প্রয়োজনীয় পাওয়ার এনার্জী জেনারেট করতে পারবে না। আর তখন এটার সঙ্গে কন্টাক্ট করা অসম্ভব হয়ে যাবে।
চন্দ্রযান ওয়ানের ডাইরেক্টরের মতামত
অপরদিকে চন্দ্রযান ওয়ানের ডাইরেক্টরের মত অনুযায়ী, বিক্রম যে স্থানটিতে ল্যান্ড করেছে ওই স্থানটি সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য সঠিক ছিল না। আর যার কারণে ঐ স্থানের বাধা প্রাপ্তির ফলে বিক্রমের সাথে ইসরোর যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। তিনি আরো মনে করেন, ইসরো এই অবস্থাতেও বিক্রমের সাথে ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন করতে পারে। কিন্তু এই কমিউনিকেশন টি ১০ থেকে ১৫ মিনিট এর জন্য হতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে যদি ইসরো বিক্রমের এন্টাকে ওপেন করতে পারে, তাহলে বিক্রমের সাথে সম্পূর্ণভাবে কমিউনিকেশন পূনরায় ফিরে আসবে।
চন্দ্রযান এর অরবিট
যাইহোক এমনটাই যেন হয়। আর যদি ইসরো বিক্রমের সঙ্গে কমিউনিকেশন করতে না পারে, তাহলে কি চন্দ্রযান ২ এর এই মিশন টি ব্যার্থ হয়ে যাবে? না বন্ধুরা, মোটেও না। কারন আমরা শুধুমাত্র ল্যান্ডারের দিকেই ধ্যান দিচ্ছি। যেটা শুধুমাত্র ১৪ দিনের এক্সপেরিমেন্টের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। অপরদিকে অরবিটার, যেটা চাঁদের মধ্যে সাত বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করবে। এবং আমাদের কাছে চাঁদের বিভিন্ন ধরনের অজানা সব তথ্য কে পৌছে দিবে।
মজার কথা হল, সাইন্সের ডিকশনারিতে ব্যর্থ বলে কোন শব্দ নেই। কারণ প্রতিটি ব্যর্থ এর থেকে নতুন নতুন ভাবে শেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। এখন সময় আমাদের বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়ানোর। অনেক দেশ ও বড় বড় স্পেস এজেন্সি এখন ইসরোর পাশে আছে। এবং তারা সবাই ইসরোকে স্বাগত জানাচ্ছে। কারণ ইসরো এত বড় একটা কঠিন চ্যালেঞ্জকে এত কাছে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছে বলে। ইসরো মিশন টিকে সঠিকভাবে লঞ্চ করেছে এবং অরবিটারকে চাঁদের অরবিটে সঠিক ভাবে স্থাপন করেছে। যা থেকে আমরা নানা ধরনের চাঁদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারব।
শুধুমাত্র ল্যান্ডার ল্যান্ড করলেও কমিউনিকেশন সহকারে চাঁদের বুকে ল্যান্ড করতে পারেনি। আর আমরা আশা করছি এটাও আমাদের মহান বিজ্ঞানীরা অতি শীঘ্রই করে দেখাবে। আর এই কমিউনিকেশন লস হওয়ার কি কারণ ছিল। সেটা অবশ্যই আমাদের বিজ্ঞানীরা খুজে বের করবে এবং আমাদের তথ্য দিবে। যেটার ফিউচার চন্দ্রযান ৩ কে আরও সঠিক এবং নিখুঁত করবে।
Comments are closed.