পানির চেয়েও বেশি স্বর্ণ ছিল যে শহরে
পানির চেয়েও বেশি স্বর্ণ ছিল যে শহরে। স্বর্ণের ইতিহাস (The History of Gold In Bangla)
বন্ধুরা,
আপনি জানেন কি, স্বর্ণ বা (Gold) আমাদের এই পৃথিবীতে কিভাবে এসেছে? এবং বর্তমানে কোন দেশের কাছে সবচাইতে বেশি স্বর্ণ তথা (Gold) রয়েছে?
ইতিহাসে একটি সভ্যতা ছিল। তার কাছে পানির চেয়েও বেশি পরিমাণে স্বর্ণ (Gold) ছিল। যদি আপনি এই ব্যাপারগুলো না জেনে থাকেন, তাহলে এই পোস্ট টি পুরোপুরি পড়বেন।
প্রাচীন মিশরীয়রা স্বর্ণ (Gold) জমিন থেকে বের করতে শুরু করে। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানব জাতি 1 লক্ষ 25 হাজার টন স্বর্ণ (Gold) খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে। স্বর্ণ (Gold) এতটা জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে একটি সুন্দর ঘটনা রয়েছে। এই মূল্যবান ধাতু এখন পর্যন্ত অজস্র সভ্যতার সৃষ্টি করেছে। অনেক সাম্রাজ্য রয়েছে যা এই স্বর্ণের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক স্বর্ণ (Gold) সম্পর্কে এই সব অজানা ইতিহাস। যা সম্পর্কে আপনার আমার হয়তো কোনো ধারনাই নেই।
এই মূল্যবান ধাতু আমাদের কাছে আসার একটি চমৎকার ঘটনা থেকে কম নয়। কারণ গত কয়েক শতাব্দীতে পৃথিবীতে লাভা কিভাবে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর উপরে পৃষ্ঠে অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম এর অধিক পরিমাণ জ্বলে এসেছে। অন্যদিকে লোহা, তামা, স্বর্ণ (Gold), মার্কারি, প্লাটিনাম এর মত মূল্যবান ধাতু পৃথিবীর ভূগর্ভে চলে গিয়েছে। ভূপৃষ্ঠে এগুলোর নাম নিশানা কিছুই ছিল না। এগুলো কেবলমাত্র পৃথিবীর ভূগর্ভে আটকা পড়ে থাকতো। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে। সাম্প্রতিক কিছু অগ্নিগিরির লাভা মাধ্যমে এই ধাতুগুলো ভূগর্ভ থেকে বাইরে চলে আসে। আর যার ফলে স্বর্ণ পৃথিবীর মহাসাগর এবং বিভিন্ন নদী-নালায় পৌঁছে যায়।
এরপর থেকেই এগুলো কিছু জায়গায় কম এবং কিছু জায়গায় অনেক বেশি মাত্রায় পাওয়া যেত। এই স্বর্ণ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানোর কৌশল, প্রাচীন মিশরীয়রা পাঁচ সহস্র বছর আগেই শিখে নিয়েছে।এবং তারা এটাও জানতো যে, এই ধাতু খুবই মূল্যবান। আর এ জন্যই ওই সভ্যতার রাজা-রাণীদের মৃত্যুর পর তাদের স্বর্ণ অলংকার এর সাথে দাফন করা হতো। এছাড়াও তাদের কবরগুলো হতো স্বর্ণের তৈরি। তারা হয়তো ধারণা করত, যেন তারা ওই স্বর্ণগুলো স্বর্গের মধ্যেই উপভোগ করতে পারত। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই স্বর্ণ (Gold) মিশরের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ওই যুগে মুদ্রার বদলে স্বর্ণের ব্যবহার করা হতো। কোন রাজা এবং তার শাসন স্বর্ণের উপর নির্ভর করত। আর যার ফলে ইজিপ্টের অনেক রাজা একসময় কাঙ্গাল হয়ে যায়।
এখন যদি মধ্যযুগের কথা বলি তাহলে ওই সময় ইউরোপ আর আরবে স্বর্ণের পরিমাণ ছিল খুবই সল্প। আর এজন্যই ইউরোপীয়রা আলকেমি দের স্বর্ণ বানানোর দায়িত্ব দেয়। তারপর আলক্যামিরা মার্কারিকে স্বর্ণ (Gold) বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। এমনটা করার কারণ হচ্ছে স্বর্ণ এবং পারদ এর মধ্যে কেবলমাত্র এক ইলেকট্রনের পার্থক্য রয়েছে। কারণ আলকেমিরা জানতো, যেখানে পারদ এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮০ সেখানে পারদ এর পারমাণবিক সংখ্যা ৭৯। শুধুমাত্র এক এলেক্ট্রন এর পার্থক্য একত্র করার জন্য ইউরোপীয়রা এবং আলক্যামিরা মরিয়া হয়ে পড়ে।
হাজার বার চেষ্টা করার পরেও তারা এই পার্থক্য কে একত্রিত করার সমাধান করতে পারেনি। কারণ কাককে যতই ওয়াশিং মেশিনে গোসল করানো হোক না কেন, সে কখনোই বকের মতো ধবধবে সাদা হতে পারবে না। কিন্তু এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আলকেমিরা একটি দিক দিয়ে সফল হয়। তা হলো সালফিউরিক এসিড নাইট্রিক অ্যাসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এই তিনটি কেমিক্যাল এর আবিষ্কার তারা করে ফেলে। যা আমাদের জন্য বর্তমান সময়ে স্বর্ণের (Gold) চেয়ে বেশি উপযোগী হয়ে গেছে। কারণ এই কেমিক্যাল গুলো ছাড়া বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার।
একদিকে আলকেমি রা কৃত্তিম স্বর্ণ (Gold) বানাতে ব্যর্থ হয়। আর অপরদিকে পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ এর লোকজন দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছে যায়। সেখানে তারা আরেকটি সভ্যতা দেখতে পায়। এই সভ্যতার নাম ছিল ইঙ্কা সিভিলাইজেশন। এই সভ্যতার কাছে এত বেশি স্বর্ণ (Gold) ছিল যে, মনে করা হয় এগুলো যেন স্বর্ণ নয়। তাদের কাছে যেন এগুলো একেবারেই পানি। শুনে অবাক হবেন যে, এই সভ্যতার কাছে লোহা বলতে কিছুই ছিলনা। এমনকি তারা লোহা কি জিনিস সেটাই চিনত না। তাদের ঘরের বেশিরভাগ আসবাবপত্র স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হতো।
তাদের কাছে এত বেশি স্বর্ণ (Gold) ছিল যে, তাদের মনে হতো সেগুলো কখনোই শেষ হবেনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল জলদস্যুরা এবং এই স্প্যানিশ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের জন্য এই ইঙ্কা সিভিলাইজেশন কে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। স্বর্ণের জন্য দক্ষিণ আমেরিকার আরো একটি সভ্যতাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আর সেখান থেকে প্রাপ্ত সকল স্বর্ণ তারা ইউরোপে পাচার করে দেয়। আর সেই স্বর্ণেরকারণে ইউরোপ তখন অনেক উন্নত হয়ে যায়। সোজা বাংলা ভাষায় বলতে গেলে ইউরোপের এই উন্নয়ন এই চুরি করে আনা স্বর্ণের ফলে হয়েছিল।
তারপরে 24 শে জানুয়ারি 1848 সালে জেমস মার্শাল নামের একজন ইউরোপিয়ান আমেরিকার একটি জায়গায় অনেক পরিমাণে স্বর্ণের খোঁজ পায়। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে এখানে 55 হাজার জনসংখ্যা গড়ে ওঠে। আর যার ফলে চমৎকার এই ধাতুর ভান্ডার টি আমেরিকাতেও বেড়ে উঠতে থাকে ।
এরপরে সাইবেরিয়াতে স্বর্ণের (Gold) খোঁজ পাওয়া যায়। সেই সাথে রাশিয়াতেও। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা স্বর্ণের পাঁচটি খনির জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ব্রিটেন দরিদ্র রাষ্ট্র থেকে স্বর্ণ লুট করে নিয়ে সমৃদ্ধ হতে থাকে।
এছাড়াও যে দেশ গুলোতে স্বর্ণ ছিলনা, সে দেশ গুলোতেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে স্বর্ণ পৌঁছে যায়।
স্বর্ণের মূল্য 24 ক্যারেট এ নির্ধারণ করা হয়। যদি এটি 8 কিংবা 9 ক্যারেটের হয় তাহলে একে স্বর্ণ (Gold) বলা যাবে না। স্বর্ণকে স্বর্ণ হওয়ার জন্য 10 ক্যারেট এর অধিক হতে হবে। আমেরিকার কথা বললে সেখানে সাধারণত 14 ক্যারেটের জুয়েলারি বানানো হয়। ইউরোপে 18 ক্যারেট এর রয়েছে। আরব দেশগুলোতে 31 ক্যারেট। যেখানে আমাদের দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে 22 ক্যারেটের জুয়েলারি বানানো হয়। 24 ক্যারেট এর গহনা সাধারণত খুবই নরম হয়ে থাকে। অধিক সময় পড়ে থাকলে তা ভঙ্গুর হয়ে ওঠে।
বলা হয় আমেরিকার কাছে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। আমেরিকার কাছে 8133.5 টন স্বর্ণের ইট রয়েছে।