পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড যেখানে শুধু সাপের বসবাস

পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড

পৃথিবীর আনাচে কানাচে অনেক সৌন্দর্যময় দ্বীপ উপদ্বীপ রয়েছে। যে দ্বীপ গুলো দেখলে মন চায় ঘুরে আসি। সেই দ্বীপ গুলো তাদের প্রাকৃতিক রুপ আর সৌন্দর্য নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে আছে। কিন্তু এরকম অনেক দ্বীপ উপদ্বীপ রয়েছে যে গুলো মরণ ফাঁদ হিসাবে পরিচিত। তবে আপনি কি কখনো শুনেছেন, সাপের দ্বীপ সম্পর্কে। এমনিতেই সাপ কথাটি শুনলেই যেন গা ছমছম করে। তার মধ্যে আবার সাপের দ্বীপ এর কাহিনী। এই দ্বীপ টি ল্যাটিন আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেষে ব্রাজিলের সাও পাওলো সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ২১ মাইল দূরে অবস্থিত স্নেক আইল্যান্ড দ্বীপ। আর ব্রাজিলের সাও পাওলো শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপে পা রাখার কেউ সাহস পায় না। যা পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্থানীয়ভাবে এটি “ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্দে” নামে অধিক পরিচিত। তাহলে চলুন বন্ধুরা পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড , ব্রাজিল

প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বছর আগে মূল ভূ-খন্ডের সাথে এই দ্বীপ টি সংযুক্ত ছিল। কালের বিবর্তনে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতার কারনে দ্বীপ টি মূল ভূ-খন্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়। ধারনা করা হয়, ১১ হাজার বছর আগে দ্বীপ টি আলাদা হওয়ার কারনে সাপ গুলো এই দ্বীপে আটকা পড়ে। যা পরবর্তিতে নতুন পরিবেশের সাথে সাপ গুলো সংখ্যায় বাড়তে থাকে।

এই অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা দ্বীপে মানুষের কোন বসতি নেই। আছে শুধু এক পাশ থেকে অন্য পাশে সাপের অবাদ বিচরণ। সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড এর সাপের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। কেউ কেউ মনে কনেন, ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সাপের দ্বীপ এ কমপক্ষে ৪০ লক্ষ ৩০ হাজার সাপ রয়েছে।

অর্থাত্‍, প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক টি করে সাপ আছে। দ্বীপ টিতে সাপের অবাদ বিচরনের কারনে ব্রাজিল সাও পাওলো বাসীর কাছে এটি সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড বা আইল্যান্ড অফ স্নেক নামে পরিচিত। যদিও এই সাপের দ্বীপ এর খেতাব “ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্দে”।

সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড এর অদ্ভুত কিছু গল্প কাহিনী

এই সাপের দ্বীপ টি নিয়ে অনেকে অনেক গল্প কথা বলেছেন। কেউ বলেন, এক দিন এক জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। জেলের খিদে পাওয়ায় খাবারের খোঁজে এই দ্বীপে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু পরের দিন নাকি তার রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায় দ্বীপের পাশে। এমনই সব গল্পে ঘিরে এই সাপের দ্বীপ টিকে নিয়ে। ব্রাজিলের মানুষের মধ্যে এই ধারণা যে, ওই দ্বীপে গেলে কেউ জীবিত ফিরে আসে না!

এছাড়া আরো একটি ঘটনা, সেটি হলো লাইটহাউস দেখাশুনার জন্য পরিবার কে নিয়ে। এই পরিবার লাইটহাউস দেখাশুনার জন্য এই দ্বীপে কয়েক বছর বসবাস করেছিলেন। তারা ১৯০৯-১৯২০ সাল পর্যন্ত এই সাপের দ্বীপ টিতে ছিলেন। এক তথ্য মতে জানা যায়, এই দ্বীপ এর সাপের দল ঘরে ঢুকে পুরো পরিবার কে মেরে ফেলে।

আরো একটি অবাক করার মত তথ্য হলো, জলদস্যুরা যে সোনাদানা লুট করতো তারা এই দ্বীপে লুকিয়ে রাখতো। আর এই লুট করা সম্পদে যাতে কেউ হাত দিতে না পারে। সে জন্য তারা কয়েক টি সাপ সেখানে ছেরে দিয়েছিলেন। তবে অনেকেই এই সোনাদানার লোভে সেখানে গিয়েছিলেন কিন্তু কেউ সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসেনি।

তারপর সেই সাপের বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে আর কয়েকটি সাপ থেকে কয়েক হাজার সাপে ভরে যায় গোটা স্নেক আইল্যান্ড দ্বীপ। আর ধারণা করা হয়, তখন থেকে এই দ্বীপ টি সাপের দ্বীপে পরিনত হয়েছে।

পৃথিবীর একমাত্র বিষধর সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড

দীর্ঘ এই দ্বীপটিতে রয়েছে সাপ আর সাপ। যেখানে চার হাজার সাপ গড়ে তুলেছে বিশাল রাজ্য। এই দ্বীপে নেই কোন মানুষ নেই বসতি। এই দ্বীপে আছে শুধু বিরল প্রজাতির সাপ। এই জন্য দ্বীপের নামকরন হয়েছে স্নেক আইল্যান্ড সাপের দ্বীপ । বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী জানা গেছে যে, সাপের এই দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড এ রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপ গোল্ডেল ল্যান্সহেড।

যা অন্যান্য বিষধর সাপের তুলনায় ৫ গুণ বিষধর। এই জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। গোল্ডেল ল্যান্সহেড সাপ উড়ন্ত পাখি কে ছোঁ মেরে মুহূর্তের মধ্যে বিষের মাধ্যমে নিস্তেজ করতে পারে। এদের বিষ এতটাই ভয়ানক যে মানুষের মাংস কে মুহূর্তের মধ্যে গলিয়ে ফেলতে পারে।

সাধারনত এরা পাখি খেয়ে থাকে। এছাড়া টিকটিকি এদের অন্যতম খাবার এছাড়া অন্য সাপও খেয়ে ফেলে। ব্রাজিলের সাও পাওলো সমুদ্র ঘেষা অপরুপ সৌন্দর্যে ভরা পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড যার আকৃতি ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটিই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে এই প্রজাতির সাপ গুলো বাস করে।

সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড এর গোল্ডেল ল্যান্সহেড সাপ দেখতে কেমন

এই সাপের দ্বীপ টিতে যতগুলো বিষধর সাপ আছে তার মধ্যে গোল্ডেল ল্যান্সহেড সাপ ৫ গুণ বিষধর। এই সাপের গায়ের রং দেখতে উজ্জ্বল হলুদ ও বাদামী বর্ণের। এই গোল্ডেল ল্যান্সহেড সাপ গড়ে ২৮ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৪৬ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এদের মাথা তীক্ষ্ণ আকৃতির হওয়ায় এদের কে লানচিহেড ভাইপার নামেও ডাকা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষ এই সাপের কারণে মৃত্যুবরন করে থাকে। এই সাপের কামড়ে একজন মানুষের ৭ শতাংশ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

স্নেক আইল্যান্ড রক্ষায় ব্রাজিল সরকার

গোল্ডেন ল্যান্সহেড যেহেতু বিরল প্রজাতির একটি সাপ, তাই ব্রাজিল সরকার এই সাপকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ববাজারে এই সাপের চাহিদা থাকায় চোরাকারবারীরা প্রায় চুরী করেন বলে ধারণা করা হয়। আর কালোবাজারে একটি গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপ ২৩ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

এই জন্য ব্রাজিল সরকার চোরাকারবারীদের হাতে থেকে রক্ষা করতে এবং সাপের কামড়ে যাতে মৃত্যু না হয়। সে জন্য সাধারণ মানুষ এই দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এখানে সাধারন মানুষ প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও প্রতি বছর সাপের ওপর গবেষণা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানীদের এই সাপের দ্বীপ এ যেতে হয়। তবে ধারণা করা হয়, সাপের এই বিষময় রাজ্যে নিয়মিত বণ্যপ্রাণী শিকারীদের আগমন ঘটে থাকে। তারা জানিয়েছে, গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপের বিষ মহামূল্যবান। কালো বাজারে এর দাম প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ড।

তাই দিন দিন এদের অবলুপ্তির পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। সমুদ্র অভ্যন্তরীন সাপের দ্বীপ এর গাছপালা ও তৃণ ভূমি কমে যাওয়ায় গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপের সংখ্যা ১৫ বছরে অন্তত ১৫ ভাগ কমে গেছে। তাই “ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচার” এই প্রাণীকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে রক্ষায় আগ্রহী।

বন্ধুরা, এই ছিল পৃথিবীর একমাত্র সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড যেখানে শুধু সাপের বসবাস যার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি সাপের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড সম্পর্কে আপনাদের কিছু ধারণা দিতে পেরেছি। পরবর্তি আলোচনার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। আর আপনাদের কিছু জানার থাকলে আমাদের কে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন, ভারতের মধ্যপ্রদেশে পাওয়া গেল ডাইনোসরের জিবাশ্ম। ধন্যবাদ

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More