ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি – যা দেখে সবাই অবাক
ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি
ব্ল্যাকহোল
ব্ল্যাকহোল ব্রহ্মাণ্ডের এমন একটি তত্ত্ব, যেটার মধ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। গত বুধবার ১০ এপ্রিল ২০১৯ বিজ্ঞানীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। যে দিন টি স্পেস ইতিহাসে অমর হয়ে গেছে। কারন আমরা যারা সাইন্স লাভার আছি, তারা সবাই এটা জানি যে, প্রথম বার আমরা মানুষ একটি সুপারম্যাসিভ ব্লাকহোলের ছায়ার একচুয়াল ইমেজ নিতে পেরেছি।
সত্যি অর্থে ব্ল্যাক হোলের পিকচার নেয়া মানে, অন্ধকারের পিকচার নেয়া। সেটাও আবার বিনা কোন ফ্লাশলাইটে। কারণ ব্ল্যাকহোলের গ্রাভিটি থেকে লাইট ও ফিরে আসতে পারে না। এর জন্য এটা শুনতে অদ্ভুত ও অসম্ভব মনে হলেও এই অদ্ভুত এবং অসম্ভব কাজটি করে দেখিয়েছে আমাদের বিজ্ঞানীরা। আসুন জানি এটা কিভাবে সম্ভব হলো।
আলবার্ট আইনস্টাইন এর তত্ত্ব
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটিতে একটি ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, আমি যেভাবে আমার থিউরির মাধ্যমে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি, তাতে বুঝেছি যে, স্পেসে এমন স্থান অবশ্যই হবে যেখান কার গ্রাভিটি অন্য যে কোন জিনিসের থেকে অনেক অনেক বেশি হবে। কিন্তু তখন এটাই প্রশ্ন ছিল যে, এটাকে কিভাবে প্রমাণ করা যায়। আর এটাকে প্রমাণ করার জন্যই পৃথিবীর ২০০ এর ও বেশি জিনিয়াস রিসার্চার দুই বছরেরও বেশি অধিক সময় ধরে আধুনিক টেলিস্কোপ আর কম্পিউটারের সাহায্যে উঠেপড়ে লেগে গিয়েছিলেন।
দ্য ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ
যে টেলিস্কোপ এর সাহায্যে এই অসাধ্যকে সাধন করা হয়েছে, তার নাম হল দ্য ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ থেকে যে পিকচারটি পাওয়া গেছে সেটা ভীষণ ই রোমাঞ্চকর ছিল। এই পিকচার টিতে একটি বিশাল অরেঞ্জ আর ব্ল্যাক এর আগুনের গোলা তীব্র গতিতে ঘুর্ণয়মান দেখতে পাওয়া গেছে। আর এটা একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। এর চারপাশে গ্যান আর ডাস্ট এতটাই বিশাল আর ডেঞ্চ যে, যেটা বিলিয়ন ডিগ্রী পর্যন্ত হিট হয়ে ব্রাইড অরেঞ্জ কালারে বার্ন হচ্ছে। যেটা এই পিকচার দেখে বোঝা যায় । যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের পিকচার নেয়া হয়েছে, সেটা ম্যাচিয়ার 87 এর মাঝে Virgo Constilution এ মজুদ আছে।
ব্ল্যাকহোলের দূরত্ব
- Advertisements -
ক্যালকুলেশন থেকে জানা যায়, এই ব্ল্যাকহোলের দূরত্ব আমাদের পৃথিবী থেকে ৫৫ মিলিয়ন লাইটস ইয়ার দূরে। বিজ্ঞানীদের মতে এই ব্লাক হোল এর ম্যাচ আমাদের সূর্যের থেকেও প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন টন বেশি। এখন আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে। তাহলে আমরা যে এতদিন বিভিন্ন সাইন্স ফিকশন মুভি এবং সাইন্টিফিক ভিডিও তে যে ব্ল্যাক হোলের পিকচার এবং ভিডিও দেখে আসছি, আসলে সেটা কি ছিল। সেটা কি আদৌ ছিল? নাকি সেটা আদৌ ধারণা করা একটা ছবি ছিল? সত্যিকার অর্থে বন্ধু সেগুলো ছিল বিজ্ঞানীদের করা একটি আর্টিস্ট ক্রিয়েশন।
সত্যিকারের ব্লাকহোলের ছবি নেওয়া অসম্ভব ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যে কাজটি করেছে সে কে একটি অভূতপূর্ব সাফল্য। সাফল্যের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একটি একচুয়াল ইমেজ নিতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু এই পিকচারটার মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, আইনস্টাইন যে ব্ল্যাক হোল তথ্য দিয়েছি্ সেই তথ্যটি শুধু একটি তথ্যই নয় বরঞ্চ এটা বাস্তবতার সাথে মিল রয়েছে। পিকচারটি দেখার পর আমাদের মাঝে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে আইনস্টাইন যে তথ্যটি দিয়েছিল সেটা সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী একটি তত্ত্ব।
এখন এই ছবি টি দেখে আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, পিকচার টা এতটা ঘোলা কেন? এর উত্তর হচ্ছে, এই ব্ল্যাক হোলের দুরুত্ব।আমরা আগেই জেনেছি যে ব্ল্যাকহোল আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক দূরে রয়েছে। এটা আমাদের পৃথিবী থেকে ৫৫ মিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূরে রয়েছে। এখন আপনি যদি কোন ছোট্ট একটি অবজেক্ট এর পিকচার দূর থেকে জুম করে তুলতে চান, তাহলে তো সেটা ঘোলা হবেই। ব্ল্যাকহোল আমাদের পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে যে, এরকম ছবি আসাটাই স্বাভাবিক।
এখানে ছোট বলতে আমাদের থেকে এই ব্ল্যাক হোল টি দূরে আছে বলে ছোট। কিন্তু এই ব্ল্যাক হোল টিকে যদি আমরা আমাদের সোলার সিস্টেমের সূর্যের স্থানে বসাই, তাহলে এটা আমাদের সোলার সিস্টেমের থেকেও অনেক গুন বড় দেখা যাবে। আপনাদের মনে হতে পারে যে এই ব্ল্যাকহোল টির ছবি নেওয়া তেমন কষ্টসাধ্য ছিল না। সামনে ব্ল্যাক হোল ছিল, আর তখন টেলিস্কোপ দিয়ে তার ছবি তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যি অর্থ্যে এই ব্ল্যাক হোলের ছবি নেয়া ভীষন কষ্টসাধ্য ছিল।
ব্ল্যাক হোলের এই হাই রেজুয়েলেশন ছবি নেয়ার জন্য ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ এর ব্যবহার করা হয়েছিল। যেটা ৮ টি টেলিস্কোপ এর একটি গ্রুপ। যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয়েছে। আর এই আটটি টেলিস্কোপ কে ব্ল্যাক হোলের দিকে টার্গেট করে ফোকাচ করে একটি হাই রেজুলেশন রেডিও ইমেজ নেয়া হয়। কিন্তু এটা সহজ ছিলনা। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা সব টেলিস্কোপ কে একটি পয়েন্টে ফোকাচ করা।
বিজ্ঞানীদের মতে এই ব্ল্যাক হোলের ছবি নেয়ার জন্য, একটি পৃথিবীর আকারের বিশাল টেলিস্কোপ প্রয়োজন ছিল। আর যেটা সম্পূর্ণ তৈরি করা অসম্ভব ছিল। তাই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সব টেলিস্কোপ কে একটি পয়েন্টে ফোকাচ করে ভার্চুয়াল আর একটি ৮ হাজার মাইল চওড়া টেলস্কোপ তৈরি করে নেয়। জন্য একটি টেলিস্কোপ কে ওটা পৃথিবীর আলাদা আলাদা প্রান্তে বসিয়ে ব্ল্যাকহোলের দিকে টার্গেট করে ছবি তোলার নির্দেশ দিয়েছিল । যেটা আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকা ব্লাকহোলের ইমেজ তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
সব থেকে অবাক করা বিষয় তো এটাই, ব্ল্যাকহোলের এই অবজারভেশন এ যে ডেটা টি ছিল যেটা টেলিস্কোপ কয়েক মাস ধরে সংগ্রহ করেছে সেটা প্রায় ২৭ লক্ষ গিগাবাইট ছিলো। আর এই ২৭ লক্ষ জিবি ডেটাকে প্রসেসিং করার জন্য জার্মানি আর ইউএসএ এর ল্যাবে পাঠানো হয়। যেটাকে দুই বছর ধরে অ্যাসেম্বেল করার পর এই ইমেজটি তৈরি হয়েছে।
- Advertisements -