মমতাজের সেই অবাক করা গোপন রহস্য আজও বন্দি তাজমহলে

মমতাজ ও শাহ জাহানের ভালোবাসার সেই অবাক করা গোপন রহস্য

আমরা কি মমতাজ ও শাহ জাহানের ভালোবাসার সেই অবাক করা গোপন রহস্য সম্পর্কে আদৌ কিছু জানি? মুঘোল সম্রাজ্যের রানীদের মধ্যে সব থেকে সুন্দরী ও ভাগ্যবতী রাণী হলেন মমতাজ। যার মৃত্যুর পর তার সৃতিতে পৃথিবীর সব চাইতে বড় সমাধি তৈরি করা হয়। যার নাম দেয়া হয় তাজ মহল। তার নাম দ্বারাই এই মহলের নাম করণ করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, মৃত্যুর পর মমতাজকে প্রথমে তাজমহলে সমাধি দেয়া হয় নি। তাকে সবার প্রথমে একটি বাগানে সমাধি দেয়া হয়েছিল। তার পর তাজ মহল বানানো বা তৈরি হলে, তার শব দেহ তুলে আনা হয় এবং তাজ মহলে রাখা হয়। অবাক হলেন তো? মমতাজের ব্যাপারে এরকমই আর ও কিছু অজানা ও রোমাঞ্চকর তথ্য জানব আমরা আজকের এই পোস্টে।

মমতাজ এর পরিচয়

মুমতাজ মহল, এই নামেই সবার কাছে পরিচিত ছিলেন সম্রাট শাহ জাহানের সব চাইতে প্রিয় পত্নী। যার শোকে ও সৃতিতে সম্রাট শাহ জাহান তাজ মহল নির্মাণ করেছিলেন। মমতাজের বিয়ের আগে তার নাম ছিল আর্জুমান্দ বানু বেগম। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার একটি পারস্য পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের আগ্রায় ১৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন পারস্যের মহানুভব আবদুল হাসান আসাফ খান। আবদুল হাসান আসাফ খান ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূর জাহানের ভাই। মমতাজ একজন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নারী ছিলেন। ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স খুররাম এর সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। এর কিছু বছর পর তাদের বিয়ে হয়ে যায়। তাদের বিয়ের দিনটি ছিল ১০ ই মে,  ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দ। বলা হয়ে থাকে যে, তার বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে।

এই প্রিন্স খুররাম পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান নামে পরিচিতি লাভ করেন। এবং তিনি তাখত ই তাউস বা ময়ূর সিংহাসনে বসেন। সম্রাট শাহ জাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন এই মুমতাজ ।এবং তিনি শাহ জাহানের খুবই পছন্দের পত্নী ছিলেন। ডেক্কান তথা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত বুরহানপুরে মুমতাজ মৃত্যুবরণ করেন। দিন টি ছিল ১৭ ই জুন, ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দ। তিনি মারা যান তার চতুর্দশ সন্তান জন্মদানের সময়। এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি, যার নাম রাখা হয়েছিল গৌহর বেগম।

মমতাজ এর প্রতি শাহ জাহানের ভালোবাসা

শাহ জাহান তার প্রিয় পত্নী আর্জুমান্দ বানু বেগমকে (মমতাজ) মমতাজ মহল উপাধি দেন। শাহ জাহান ও মমতাজের মোট ১৪ জন সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে একজন হল আওরঙ্গজেব। তবে কিছু সন্তান জন্মানোর আগেই মারা যান। আবার অনেকেই কিশোর বয়সেই মারা গিয়েছিল। মহারাণী জাহানারা বেগম ছিলেন এই মমতাজ ও শাহ জাহানেরই মেয়ে। শাহ জাহান তার অন্যান্য রানীদের থেকে মমতাজকেই সব চেয়ে বেশি ভালো বাসতেন একথা বলার অপেক্ষা থাকে না। তিনি তাকে খুবই বিশ্বাস করতেন। তার বিশ্বাস এতটাই গভীর ছিল যে, শাহ জাহান তার শাহী সিল মোহর মমতাজের হেফাজতে রাখতেন। মমতাজের অপূর্ব সৈন্দর্য এর কথা বিভিন্ন কবিরা তাদের কবিতার মাধ্যমে উল্লেখ্য করে গেছেন। মমতাজ ঘুরতে খুবই পছন্দ করতেন। সেই সাথে শাহ জাহান ও তাকে এক মুহূর্তের জন্যে ও চোখের আড়াল করতেন না। যুদ্ধের সময় হাতির লড়াই দেখতে খুবই পছন্দ করতেন মমতাজ। তাই তিনি যুদ্ধে শাহ জাহানের সঙ্গে যেতেন।

কিন্তু ১৭ ই জুন, ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে, মমতাজ মারা যান। বলা হয়ে থাকে যে, সেই সময়ে তিনি শাহ জাহানের সাথে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। মমতাজের মৃত্যুর পর তার শব দেহ শাহ জাহানের কাকা ডানিয়াল তাত্তি নদীর তীরে যানিয়াবাদ গার্ডেনে সমাহিত করেন। মমতাজের মৃত্যুর পর শাহ জাহান পুরো পুরি ভেঙ্গে পরেন। প্রায় এক বছর তিনি রাজ্যের সকল কার্যক্রম ছেড়ে শোক পালন করেন। এর পর গার্ডেনর মমতাজের সেই কবর থেকে তার সোনায় মোরানো কফিন তুলে আনা হয়। এবং আগ্রার যমুনা নদীর তীরে একটি ঘরে সমাধি দেয়া হয়। শাহ জাহান এতটাই ভালোবাসতেন মমতাজকে যে, নিজের রাজ মহল ছেড়ে ঐ সমাধির পাশেই তিনি সৈন্য দের নিয়ে বাস করতেন। এবং এখানে থেকেই সম্রাট শাহ জাহান পৃথিবীর সব থেকে বড় এবং সুন্দর সমাধি তথা তাজ মহল বানানোর পরিকল্পনা করেন। যা বানাতে প্রায় ২২ বছর সময় লেগে গিয়েছিল।

মমতাজ এবং শাহ জাহানের ভালো বাসার গল্প ছিল এক অদ্ভুত ও বিস্ময়কর। ইতিহাস তাদের বরাবরই কুর্নিশ জানিয়ে আসবে।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More