সাত বছর যাত্রা করে টাইটানে প্রাণের খোঁজ করবে রোবট

সাত বছর যাত্রা করে টাইটানে প্রাণের খোঁজ করবে রোবট

পৃথিবীর বাইরে জীবের খোঁজ করার জন্য, নাসা সহ বেশ কিছু স্পেস এজেন্সি কয়েক দশক ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ এবং প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলে, বিজ্ঞানীরা প্রায় ই কোন না কোন ধরনের মিশন লঞ্চ করে আসছে। যা আমাদের ঐ সমস্ত গ্রহ ও উপগ্রহ সম্পর্কে, অনেক অজানা তথ্যকে জানতে সাহায্য করে। ফলে আমরা নিত্যদিন মহাকাশ সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। সাত বছর যাত্রা করে টাইটানে প্রাণের খোঁজ করবে রোবট

বিজ্ঞানীদের বেশকিছু মহত্বপূর্ণ স্পেস মিশন রয়েছে। যা আমাদের সোলার সিস্টেমের সব গ্রহ এবং উপগ্রহ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করতেছে। একই সাথে আমাদের নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছে।

শনি গ্রহের বৃহত্তম চাঁদ এবং সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল টাইটান। নাসা সেখানে একটি মিশন লঞ্চ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 1979 এবং1980 সালের দিকে ভয়েজার-ওয়ান ও ভয়েজার 2 প্রথম স্পেস ক্রাফট ছিলো। যারা টাইটান কে কাছ থেকে দেখার প্রচেষ্টা করে। টাইটানের বায়ুমণ্ডল প্রায় খুবই ঘন। তাই ঐ দুটি স্পেস ক্রাফট এর পক্ষে টাইটানের ভূ-পৃষ্ঠকে দেখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভয়েজারের এই খোজ বিজ্ঞানীদের অনেকটাই অবাক করেছে।

টাইটানের চাঁদ

আমাদের সৌরমণ্ডলের টাইটানের এই চাঁদ, অন্য সব চাঁদের থেকে একদম আলাদা। আর এর আলাদা হওয়ার কারণ, এই চাঁদের বায়ুমণ্ডল। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, এর বায়ুমণ্ডল কি দিয়ে তৈরি এবং এর ভিতরে কি হতে পারে। এই সমস্ত প্রশ্ন সবার কাছে ছিল। কিন্তু উত্তর কারো কাছে ছিল না। আর এইসব প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করার জন্য আর ও একটি ঐতিহাসিক মিশন করা হয়। যার নাম ছিল দা ক্যাসিনি হুইগেস মিসন (The Cassini-Huygens Mission).। যেটার সাহায্যে মানব দ্বারা করা প্রথম কোন স্পেস ক্রাফটকে অন্য কোন গ্রহের চাঁদে ল্যান্ড করা হয়। আর আমরা ঐ চাঁদের বেশ কিছু অদ্ভুত অবস্থা দেখতে পাই।

টাইটানের বর্ণনা

এক সময় টাইটানে নদী, হ্রদ ও বিশাল সমুদ্র ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে আমাদের পৃথিবীতে এসব যে অবস্থায় আছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। আমাদের সূর্যের থেকেও প্রায় 1.4 বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই চাঁদ। যেখানকার অ্যাভারেজ টেম্পারেচারমাইনাস মাইনাস 179 ডিগ্রী সেলসিয়াস,  সেখানে জল তরল অবস্থায় থাকতেই পারবে না। তাহলে কিভাবে সেখানে নদী হতে পারে? আর এই নদী কি দিয়ে তৈরি?

সত্যিকার অর্থে, টাইটানের বহমান নদী জল দ্বারা সৃষ্টি নয়। এটা লিকুইড মিথেন দ্বারা তৈরি। এই ক্যাসিনি হুইগেস মিসন (The Cassini-Huygens Mission) এর সাহায্যে, এই উপগ্রহের প্রায় সম্পূর্ন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ২০০৫ সালে এই ক্যাসিনি অরবিটাল টাইটানে হুগেন্স প্রোবকে ডেলিভার করে। এরপর হুগেন্স প্যারাসুটের সাহায্যে টাইটানের ভূ-মিতে সফল ভাবে ল্যান্ড করতে সক্ষম হয়। এই প্রোব টাইটানের হাওয়া এবং বায়ু মণ্ডলকে নিখুত ভাবে অধ্যায়ন করে। একই সাথে টাইটানের ভূ-মির কিছু অংশের ক্লোজ আপ ডিটেইলস আমাদের সাথে শেয়ার করে।

টাইটানের আবহাওয়া

এছাড়াও এই মিশন থেকে এটাও জানা যায় যে, টাইটানের মোটা বরফের নিচে লিকুইড বা তরল অবস্থায় জল রয়েছে। এই উপগ্রহটি মূলত বরফ আর পাথর এর মত বস্তু দ্বারা গঠিত। টাইটানের বায়ুমণ্ডল মূলত নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। ছোট ছোট যৌগ পদার্থ মিলে, এখানে মিথেন এবং ইথেনের মেঘ ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ কুয়াশার তৈরি করেছে। টাইটানে পৃথিবীর মতোই বিভিন্ন ঋতু রয়েছে। একই সাথে আছে মৌসুমী জলবায়ু। এইসব কারণে টাইটান কে আদিম পৃথিবীর সাথে তুলনা করা হয়। যদিও পৃথিবীর তুলনায় টাইটানের তাপমাত্রা অনেকটাই কম।

আর বিজ্ঞনীরা মনে করছেন টাইটানের এ সমস্ত নদী এবং এর ভূপৃষ্ঠের নিচে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। আর এই প্রাণের খোজ করার জন্যই, নাসা এবার টাইটানে ভিন্ন রকমের একটি মিশন লঞ্চ করতে যাচ্ছে। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

টাইটান:

আমাদের সৌরমণ্ডলের গ্যানিমিডি (Ganymede Moon) এরপর টাইটান দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদ। গ্রহের সাথে অনেকটা সাদৃশ্যতা থাকার কারণে অনেক সময় এটাকে গ্রহ সাদৃশ্য উপগ্রহ বলা হয়ে থাকে। এটা আমাদের বুধ গ্রহের থেকেও অনেকটা বড়। অনেক রিসার্চার এটা মনে করেন যে, শনি গ্রহের এই চাঁদেও জীবন বা জীবের সন্ধান মিলতে পারে। কারণ এখানে অর্গানিক কম্পাউন্ড পর্যাপ্ত পরিমানে আছে। আর এর জন্যেই ১৫ সেপটেম্বর ২০১৭ সালে নাসা তার ক্যাসিনি স্পেস ক্রাফটকে শনি গ্রহের বায়ুমন্ডলে ফেলে মিশনের সমাপ্তি করে।

নাসা তার স্পেস ক্রাফটকে নষ্ট করার কারণ হল, টাইটানে থাকা জীবের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। কারণ এর মধ্যে থাকা নিউক্লিয়ার ব্যাটারির কারণে, টাইটেনে থাকা জীবের ক্ষতি হতে পারে।

দা ড্রাগন ফ্লাই মিশন (The Dragon Fly Mission)

খুশির খবর হল যে,  নাসা 2034 সালে এই গ্রহে আবারো মিশন লঞ্চ করবে। যা অবশ্যই ঐতিহাসিক কিছুর খোজ করবে। নাসা এই মিশনের নাম দিয়েছেন, দা ড্রাগন ফ্লাই মিশন (The Dragon Fly Mission)। এই মিশন টিতে নাসা টাইটানে একটি ফ্লাইং অবজেক্ট লঞ্চ করবে। যার নাম দেয়া হয়েছে ড্রাগন ফ্লাই (Dragon Fly)। ২৮ শে জুন ২০১৯ এ নাসা এই মিশনটির ঘোষণা করেন। নাসার এই রুটার ক্রাফট টাইটানের বেশ কিছু লোকেশনে গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করবে। যেটার সাহায্যে আমরা টাইটানে হয়ে চলা প্রী-বায়োটিক ক্যামিকেল প্রসেস এর খোজ করব। ঠিক যেমনটা অতীত থেকে আমাদের পৃথিবীতে বর্ত্মান পর্যন্ত হয়ে আসতেছে। যার জন্য পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টি হয়েছিল।

যদি সত্যিই টাইটানে আমরা কোন প্রাণীর খোঁজ করতে পারি, তাহলে এতা আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মিশন ও খোজ হয়ে যাবে। এর থেকেই এটা প্রমাণ হবে যে, শুধুমাত্র পৃথিবীতেই না, প্রাণ ইউনিভার্সের অনেক স্থানেই হতে পারে।

মিশন প্রস্তুতি

এই মিশন টি ২০২৬ সালে লঞ্চ করা হবে। এবং প্রায় দীর্ঘ ৭ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করার পর , ২০৩৪ সালে এটা টাইটানে গিয়ে পৌছাবে। এই মিশনটি ভিশন ক্রিটিক্যাল এবং চ্যালেঞ্জিং  হবে। কারণ মঙ্গল গ্রহের পর এটাই দূরে অবস্থতি একটি পিণ্ড, যেখানে নাসা রোবট পাঠাচ্ছে।

টাইটানের দূরুত্ব

টাইটান আমাদের কাছ থেকে এতটাই দূরে রয়েছে যে, সেখান থেকে কোন তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছাতে ৪৩ মিনিট সময় লেগে যায়। এর মানে ড্রাগন ফ্লাই টাইটান থেকে আমাদের কাছে যেসব তথ্য পাঠাবে, সেটা আমাদের কাছে এসে পৌছাতে ৪৩ মিনিট সময় লেগে যাবে।

এটা থেকে হয়তো আপনি বুঝতে পারছেন যে, নাসাকে এই মিশন পরিচালনা করার জন্য, একটি নির্দেশ পাঠাতে কত টা সময় লেগে যাবে এবং অপেক্ষা করতে হবে। পৃথিবী থেকে পরিচালনা করা ভিশন কঠিন হয়ে যাবে। এই অবস্থাতে মেশিন টিকে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। ড্রাগন ফ্লাই টাইটানের সার্ন গ্রী লি নামের একটি স্থানে ল্যান্ড করবে। এই স্থান টি বাছাই করার প্রধান কারণ হল, এই স্থান টি সমতল। এবং এইখানে এক সময় সমুদ্র ছিল। যেটা এখন সম্পূর্ন শুকিয়ে গেছে। যার কারণে এই স্থানে অধ্যায়ন করা সহজ হবে। একই সাথে ড্রাগন ফ্লাই এ থাকা ক্যামেরার সাহায্যে আমরা টাইটানকে আরো কাছে থেকে দেখতে পারব। সেটাও একদম বর্ণনার সাথে।

টাইটান সম্পর্কে ধারনা

এই টাইটানের বায়ুমন্ডলের গঠন থেকে এইটা ধারনা করা হয় যে, এখানে প্রাণ থাকতে পারে।বা সম্পূর্ণ জীবন না পাওয়া গেলেও, এমন কোন রাসায়নিক পদার্থ হতে পারে, যা আমাদের একদম অজানা।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More