নীল তিমি কেন ডাইনোসরের থেকেও বিশাল হয়? রোমাঞ্চকর তথ্য

নীল তিমি কেন এত বিশাল হয়?, রোমাঞ্চকর তথ্য

নীল তিমি কেন এত বিশাল হয়?

আজ পর্যন্ত আমাদের এই পৃথিবীতে যত প্রকার জীবের আবির্ভাব ঘটেছে, তার মধ্যে সব থেকে বিশাল আকৃতির জীবের কথা যদি বলি, তাহলে সেটা ডাইনোসর নয়। বরং এটা হল নীল তিমি। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়ে থাকে ব্লু হোয়েল (Blue Whale)। যা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সব চাইতে বড় প্রাণী মানা হয়ে থাকে।

কি এমন কারণ আছে? এদের দেহের আকার কিভাবেই বা এত বিশাল হল? এত বেশি ওজন বা কিভাবে হল? এর পিছনে কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে? এসব সহ আর ও অজানা সব কথা জানব আজকের এই পোস্টে। তো চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

দূর্ভাগ্য বশত এই প্রশ্নের ১০০% উত্তর কোন বিজ্ঞানির কাছেই নেই। কিন্তু তাদের দেয়া কিছু অবাক করা অনুমান রয়েছে। যেগুলো নিয়ে আজ আমরা কথা বলব। মনে রাখবেন, এই সব সাধারন মানুষের দেয়া কোন অনুমান নয়। নীল তিমি এত বিশাল হবার পিছনে দুইটি কারণ বলা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম টি হচ্ছে আবহাওয়াগত কারণ (Climate Factors)। এবং দ্বিতীয় টি হল নিজেদের বিবর্তনগত ক্ষমতা (Evolutionary Adaptation)।

আবহাওয়াগত কারণ (Climate Factors)

এই বিবর্তনগত ক্ষমতা বা শরীরের সাথে সম্পর্কিত ক্ষমতা বলতে বোঝানো হয়েছে যে, এই প্রাণী অত্যান্ত বিশাল। এই প্রাণী এত বিশাল যে, ভূমিতে বা মাটির উপর এত ভারি ওজনের দেহ নিয়ে বসবাস করা বা স্থির থাকা কখনোই সম্ভব নয়। কেননা মধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে এত ভারি ওজনের শরীর সব সময় স্থির থাকতে পারবে না। আর যদি এত বিশাল আকারের প্রাণীকে মাটির উপর দিয়ে আনা হয়, তাহলে সে তার নিজের ওজনের প্রভাবেই মারা যাবে। এর কারণ হল যে, এত ওজন কোন অঙ্গের দ্বারা ধরে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু পানিতে এই সমস্যা দেখা যায় না। কেননা সেখানকার মধ্যাকর্ষণ বল কে নিয়ন্ত্রন করার জন্য বয়ান্ট ফোর্স (Buoyant Force) ব্যাবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে বলতে হয় যে, আপনি একটি প্লাস্টিকের বোতলকে পানিতে ডোবালেন। আপনি তখন দেখতে পাবেন যে,  সেটা আবার উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে ভেসে ওঠে। ঠিক এরকমই এই প্রাণী টির ক্ষেত্রে ঘটে। আর এরকম টা হয় শুধু মাত্র এই বয়ান্ট ফোর্সের কারণেই।

এজন্য পানিতে বসবাস করা এই নীল তিমির বিশাল আকারের দেহ ও ওজন নিয়ে কোন সমস্যা হয় না। তার সাথে সাথে এটাও জেনে নিন যে, নীল তিমি একটি স্তন্য পায়ী প্রাণী। মানে হল, এরা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। এবং বাচ্চাদের মানুষের মত বুকের দুধ পান করায়। আর এই প্রাণী গুলো সমুদ্রের গভীরে বসবাস করে। সমুদ্রের গভীরের পানি অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। আর তাই এই বিশাল দেহের পানীর প্রয়োজন হয় নিজেকে গরম রাখার জন্য। কেননা ঠান্ডা পানিতে যত প্রাণী বড় হবে, তত ভালো হবে। নিজের শরীরকে গরম রাখার চেষ্টা করবে।

বিবর্তনগত ক্ষমতা (Evolutionary Adaptation)

আর দ্বিতীয় কারণ হল এভুলোশনারী অ্যাডাপ্টেশন  (Evolutionary Adaptation)। এর মানে হল, ক্রমাগত উন্নতির ফলে প্রাপ্ত দেহ। আর এই সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের কে ৫ কোটি বছর পূর্বে ফিরে যেতে হবে। তো চলুন তাহলে আমরা ৫ কোটি বছর পূর্বের সেই ইতিহাসে ফিরে যাই।

৫ কোটি বছর পূর্বেই নীল তিমি প্রথম পৃথিবীতে আসে, এবং তার বিস্তার ও বিকাশ হওয়া শুরু হয়। আর প্রায় তখন থেকেই এই স্তন্য পায়ী প্রাণী টি পৃথিবীতে বসবাস করছে। তাই বলা যায়, এরা ক্রমাগত উন্নতির কারণে এত বিশাল দেহের অধিকারী হয়েছে। আর ঐ সময়টা শুরু হয় হিম যুগে। অর্থ্যাৎ আইস এইজের সময়। যেটা প্রায় ১২ বছর পর্যন্ত ছিল। আর এই সময় পানিতে বেচে থাকার জন্য নিজের দেহকে বড় করে নিয়েছিল এই নীল তিমি। কিন্তু কিছু বিজ্ঞানী এই মতবাদকে সন্দেহ করে। এত কম সময়ে এত বেশি বিকশিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ নীল তিমির এর পূর্বের আকার মাত্র ১৫ ফিট ছিল। যা বর্তমানে প্রায় ৯০ ফিট থেকে প্রায় ১০০ ফিটে পৌছে গেছে। আজ পর্যন্ত আমরা সবচাইতে যে লম্বা নীল তিমি পেয়েছি তার দৈর্ঘ্য শুনলে আপনারা সবায় অবাক হয়ে যাবেন। আর সেটার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১১১ ফিট।

নীল তিমি বড় হওয়ার কারণ

এখন যদি এর ব্যাখ্যা করতে যাই, বা এর ব্যাখ্যা কি দেয়া হয়েছে সেটা যদি বলি, তাহলে ব্যাপার টা এমন দাঁড়াবে যে। যখন হিম যুগ চলছিলো, তখন উত্তর গোলার্ধ থেকে সমস্ত পানি জমতে শুরু করে দেয়। যার কারণে পানিতে অনেক ঠান্ডার সৃষ্টি হতে শুরু করে। এবং এর কারণে সমুদ্রের প্রায় কিছু ছোট মাছ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

কিন্তু কিছু বড় মাছ, যেমন নীল তিমি তার তুলনা মুলক বড় শরীরের জন্য বেচে ছিল। আর সেই সময় সমুদ্রের গভীরে খাওয়ার জন্য যে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান ছিল, তা সব উপরে আসতে শুরু হয়ে যায়। কেননা ঐ সময় পানির প্রবাহ এমন ছিল যে, যার ফলে এমন টা ঘটেছিল। আর যার ফলে, সমুদ্রের সকল পুষ্টি উপাদান গোটা সমুদ্রে না ছড়িয়ে পরে, সমুদ্রের শুধু এক জায়গায় জমতে শুরু করে। আর এই কারণে নীল তিমির শিকার করা খুব সহজ হয়ে গেল। আর তার শিকার করার স্টাইল ও ছিল, একসাথে অনেক পানি সে তার মুখের ভিতর ভরিয়ে নিত। আর সেই পানি থেকে সকল পুষ্টি উপাদান গ্রহন করে, সকল পানি পুনরায় বের করে দিত।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটা নীল তিমি একসাথে ১২০ টন পানি বের করতে পারে। আর এই পানির মাত্রা বেশি হওয়ার সাথে সাথে তার খাবারের মাত্রা এবং পুষ্টি মাত্রাও বেড়ে যেত। যা প্রয়োজনের তুলনায় তার শরীর অনেক বেশি খাবার ও পুষ্টি গুন পেয়ে যেত। যার কারণে নীল তিমি আর ও বড় হতে শুরু করে। আর এভাবেই সে বেশি বেশি শিকার করা শুরু করে। আর এভাবেই উন্নতির ফলে তার শরীর এত বিশাল হতে থাকে।

নীল তিমির দৈহিক গঠন

আর একটা আজব ব্যাপার জানলে অবাক হবেন যে, নীল তিমির মুখ যতই বড় হোক না কেন, এর ইস ও ফ্যাকাস। অর্থ্যাৎ যেখান দিয়ে খাদ্য পাকস্থলিতে যায়, সেই জায়গা টি অনেক ছোট হয়ে থাকে। যেমন ধরুন, যদি একটি পাউরুটি নীল তিমিকে খেতে দিতে চান, তাহলে সে একবারই তা খেতে পারবে না। কারণ তার খাদ্য নালীর আকার অনেক ছোট হয়ে থাকে। এজন্য এরা ছোট ছোট মাছ খেতে খুবই পছন্দ করে। আর যদি নীল তিমির হৃদপিন্ড বা হার্টের (Heart) ব্যাপারে কথা বলতে যাই, তাহলে বলতে হয় যে। এর হৃদপিন্ডের আকার একটা নরমাল মাইক্রো (Car) বা কার গাড়ির সমান হয়ে থাকে। আর এর জিহ্বার উজন পুরো একটা হাতির ওজনের সমান। আর এই রহস্যময় প্রানীর বড় হওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে। শুধু এসব কারণেই নয়। বরং আর ও অন্য কারণ রয়েছে। যে কারণের জন্য এই প্রাণী এত বিশাল আকারের হয়েছে। যা আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারে নি।

আর আজকের দিনে নীল তিমি যা খায় তা দিন দিন কমতে থাকছে। আর পানিতে দ্রবভীত অক্সিজেনের পরিমান ও কমতে থাকছে। আর তাই নীল তিমির জন্য এইটা বিপদ জনক সংকের হয়ে দাড়িয়েছে। কথা হল, নীল তিমি যখন এক সময় বেশি খাবারের জন্য নিজের শরীরকে বড় করে ফেলেছিল। ঠিক তেমনি ভবিষ্যতে খাবারের অভাবের ফলে পূর্বের মত আবার কি ছোট করতে পারবে? নাকি অন্য প্রানীর মত নীল তিমিও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটাই মুলত মুখ্য বিষয়।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More