৩২ বিট ও ৬৪ বিট প্রসেসর কি এবং কোন টি সবচাইতে ভালো

32 Bit vs 64 Bit Processor and Operating System | Which One Do You Need?

আজকের পোস্টের বিষয় বস্তু হচ্ছে, ৩২ বিট ও ৬৪ বিট প্রসেসর বা অপারেটিং সিস্টেম কি। এবং কোন টি সবচাইতে ভালো। আইবিএম (IBM) ২০০৩ সালে প্রথম ৬৪ বিটের প্রসেসর (Processor) তৈরি করে। আমি মনে করি যে, এই প্রশ্ন ও বিষয় বস্তু নিয়ে অনেকে বিভিন্ন ধরনের কনফিউশনে ভোগে। অনেকে আবার একটা বষয় ভেবেই অহেতুক অনেক সময় পার করে দেয়। ভাবে যে, আমি আমার পিসিতে ৩২ বিট এর প্রসেসর (Processor) বা অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) ইন্সটল দেবো? নাকি ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) ইন্সটল দেবো। কারণ, আমাদের পিসিতে কোন ধরণের সফটওয়্যার ইন্সটল দিতে গেলে ৩২ বিট নাকি ৬৪ বিট এই টা জানতে চায়।

এ রকম কিছু প্রশ্ন নিয়ে অনেকে কনফিউশনে থাকে। আজকে আমি এই সব প্রশ্নের উত্তর ও বিষয় বস্তু গুলো পরিস্কার ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো। তো প্রথমেই একটা জিনিস জেনে নেয়া দরকার। সেটা হচ্ছে ৩২ বিট এবং ৬২ বিটের সাথে আর একটা নাম্বার আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন যেটা হল x86 অথবা x64..। x86 বিট আর ৩২ বিট এই দুইটা মুলত একই। তেমনি ভাবে x64 বিট আর ৩২ বিট একই।

৩২ বিট আর ৬৪ বিট এই দুইটা প্রসেসরকে (Processor) দুইভাগে ভাগ করার কারণ হল এর মেমরি অ্যাড্রেসিং পাওয়ার (Memory Addressing Power)। মেমরি আড্রেসিং পাওয়ারের মাধ্যমে এই দুইটাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৩২ বিটে মেমরি অ্যাড্রেসিং পাওয়ার টা হল একটু কম। আর ৬৪ বিটে এর পাওয়ার অনেক বেশি।

এখন যদি আমরা বুঝতে চাই যে, এই মেমরি আড্রেসিং পাওয়ার আসলে কি, তাহলে বলতে হবে, আমরা যখন কম্পিউটারে কোন কাজ করি বা কম্পিউটার যখন কোন একটা ডেটা প্রসেস করে। তখন সেই ডেটা গুলোকে কম্পিউটার টেম্পোরারি একটা যায়গায় রেখে দেয়। সেটা স্টোর করার জন্য আমরা ব্যবহার করে থাকি হল র‌্যাম। এই টেম্পোরারি ডেটা গুলো র‌্যামে রাখতে হয়। এখন ৩২ বিটের যে অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) বা প্রসেসর (Processor) রয়েছে, সেটাতে আড্রেসিং পাওয়ার টা লো হয়। আর তুলনামুলক ভাবে ৬৪ বিটে বেশি হয়।

এই হিসেব কিভাবে করা হয়

৩২ বিটে মেমরি অ্যাড্রেসিং পাওয়ার কত হবে আর ৬৪ বিটে কত হবে। এই হিসেব টা করার জন্য আমরা একদম ছোট থেকে শুরু করব। ১ বিটের যদি আমরা প্রসেসরের (Processor) কথা চিন্তা করি, তাহলে এই ১ বিটের প্রসেসর এর মধ্যে ২টা মেমরি লোকেশন থাকবে। অর্থ্যাৎ ২টা অ্যাড্রেসিং লোকেশন থাকবে। এবং সেই বিট টা যদি বারানো হয়, মানে ২ বিট যদি হয়, তাহলে এর লোকেশন ডাবল হয়ে যাবে। মানে মেমরি লোকেশন বা অ্যাড্রেসিং লোকেশন থাকবে ৪ টা। আবার আমরা যদি ৩ বিটের কথা ভাবি, তাহলে এর মেমরি লোকেশন হবে ৮ টি। মানে হচ্ছে যে বিট থাকবে বা যত বিট হবে, আমরা সেই বিটের উপর ২ টাকে পাওয়ার হিসেবে অ্যাড করে দেব। অর্থ্যাৎ

  • 2^1=2
  • 2^2=4
  • 2^3=8
  • 2^4=16
  • 2^5=32

৩২ বিট

এভাবে যদি আমরা ৩২ পর্যন্ত যাই তাহলে ৩২ বিটের প্রসেসর (Processor) মানে হচ্ছে 2^32=4294967296. এখানে যে সংখ্যা টা দাঁড়ায় তা হলো প্রায় চার বিলিয়নের মত। আর এই চার বিলিয়নকে যদি আমরা গিগাবাইটে কনভার্ট করি তাহলে, সেটা চার গিগাবাইট অর্থ্যাৎ চার জিবি। সো ৩২ বিটের প্রসেসরে চার জিবি পর্যন্ত মেমরি বা র‌্যাম সাপোর্ট করে। ৩২ বিটের প্রসেসরে বা অপারেটিং সিস্টেমে যদি আপনি চার জিবির উপরে কোন র‌্যাম অ্যাড করেন, তাহলে সেই র‌্যাম টা ব্যবহার হবে না। মানে হল, ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) বা প্রসেসরের মধ্যে শুধু মাত্র চার জিবি পর্যন্ত র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে। এর বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

৬৪ বিট

আর ৬৪ বিট এর কথা যদি বলি তাহলে এর মেমরি লোকেশনের নাম্বার টাকে কনভার্ট করতে হবে। অর্থ্যাৎ 2^64=18446744073709551616 এত বড় লম্বা সংখ্যা দাঁড়ায়।  আর এই টাকে যদি আমরা গিগাবাইটে কনভার্ট করি তাহলে, গিগাবিট ও অনেক বড় হয়ে যায়। সেই জন্য আমরা এটাকে এক্সাবাইটে কনভার্ট করব। অর্থ্যাৎ 16 ExaByte হবে। আর 16 Exabyte= 17179869184 GB বা গিগাবাইট। তাহলে বলা যায় যে, এই ১৬ এক্সাবাইট র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে ৬৪ বিটের প্রসেসরে (Processor) বা অপারেটিং সিস্টেমে (Operating System)। কিন্তু এত বড় র‌্যাম এখনো আবিষ্কার হয় নি। আর কবে হবে সেটাও বলা মুশকিল।

তাহলে মুল কথা হল, ৩২ বিটের প্রসেসর (Processor) বা অপারেটিং সিস্টেমে (Operating System) আমরা সর্বোচ্চ চার জিবি র‌্যাম ব্যবহার করতে পারব। আর ৬৪ বিটের প্রসেসর বা অপারেটিং সিস্টেমে ১৬ এক্সাবাইট বা মার্কেটে যত আছে, তত পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারব। সহজ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হল লেটেস্ট। এখন নিত্য নতুন যে সফট্‌ওয়্যার গুলো রিলিজ হচ্ছে বা গেম রিলিজ হচ্ছে বা বড় বড় সফটওয়্যার যেগুলো অনেক ভারী হয়ে থাকে সেগুলো ৬৪ বিট রিকোমেন্ড করে। কারণ হল ৩২ বিটের তুলনায় ৬৪ বিটে র‌্যাম বেশি।

পিসির র‌্যাম

এখন আপনার পিসির র‌্যাম যদি চার জিবির কম হয়, তাহলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার জন্য হাইলি রিকোমেন্ড করা হল ৬৪ বিট ব্যাবহার করার জন্য। এখন আবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, র‌্যাম চার জিবি্র কম হলে ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) ব্যাবহার করা যাবে কি না। এর উত্তর হল, হ্যাঁ। আপনি ৩২ বিটের সফট্‌ওয়্যার ৬৪ বিটে চালাতে পারবেন। কিন্তু ৬৪ বিটের  গুলো ৩২ বিটে চলবে না। ২ জিবি র‌্যাম ওয়ালা পিসিতে ৬৪ বিট উইন্ডোজ নিতে পারবেন। কিন্তু অরজিনাল ৬৪ বিটের জন্য বানানো সফটওয়্যার গুলো স্লো কাজ করবে।

উদাহরণ হিসেবে অ্যাডবি আফটার ইফেক্ট (Adobe After Effect) এর কথা বলা যায়। এটার রিকয়ারমেন্ট যদি ৬৪ বিটের ৬ জিবি র‌্যাম হয়। আর আপনি যদি ৩২ বিটের একটা পিসিতে ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে আডবি আফটার ইফেক্ট টা রান করান। তাহলে অবশ্যই সেটা অনেক স্লো হয়ে যাবে। এবং কাজ করতে গিয়ে ঝামেলা করবে।

কিন্তু যাদের একদম করার কিছুই নেই। মানে ৬৪ বিটে আপগ্রেড করতে পারছেন না। আপনার র‌্যাম ৪ জিবি কিংবা তার কম তাহলে আপনি ইউজ করতে পারেন ৬৪ বিটের প্রসেসর (Processor)। তবে পারফরমেন্স টা একটু লো হবে। আর চার জিবির উপরে যদি আপনার র‌্যাম হয়ে থাকে এবং আপনি যদি ৩২ বিটের অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করেন। তাহলেও আপনি মন মত স্পীড পাবেন না। কারণ হল আপনার পিসি টা শুধু মাত্র চার জিবি পর্যন্ত র‌্যাম ব্যবহার করতে পারবে। আর এর বেশি যা থাকবে সে টুকু ইউজ করবে না। সো মেইন ডিফারেন্স টা হল, ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেমে ৪ জিবি পর্যন্ত র‌্যাম ইউজ করা যায়। ৬৪ বিট প্রসেসর এ ১৬ এক্সাবাইট বা ৪ জিবি এর উপর থেকে শুরু করে যত আছে তত ব্যাবহার করা যায়।

এখন মোবাইলেও ৬৪ বিট প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।

আপনার পিসি কত বিটের দেখুন

আপনার পিসি মুলত কত বিটে আছে সেটা দেখার জন্য আপনাকে প্রথমে মাই কম্পিউটারে (My Computer) রাইট বাটন ক্লিক করতে হবে। তার পর প্রোপার্টিজ (Properties) সিলেক্ট করতে হবে। সেখানে দেখতে পাবেন যে, সিস্টেম টাইপ (System Type) লেখা রয়েছে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার বর্তমান কম্পিউটার কত বিটে রয়েছে। একই সাথে আপনার প্রসেসর (Processor) কত বিটের বা কত বিট বেইজ্‌ড সেটাও দেখাবে।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More