ইউনিভার্সের যে মূল্যবান বস্তু পৃথিবীতে আনলে অর্থের অভাব ধ্বংস হবে

ইউনিভার্সের যে মহামূল্যবান জিনিস পৃথিবীতে আনলে অর্থের অভাব ধ্বংস হয়ে যাবে।

আমাদের এই ইউনিভার্স ভীষণ অদ্ভুত এবং রহস্যময়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মহাশূন্য সম্পর্কে জানার জন্য ভীষণ আগ্রহী। এই আগ্রহ থেকে মানুষ মহাশূন্য সম্পর্কে জানার জন্য অনেক ধরনের খোঁজ করে আসছেন। এইসব খোঁজ করতে গিয়ে আমরা অদ্ভুত এবং মহামূল্যবান অনেক জিনিস এর সন্ধাণ পেয়েছি। যখন মূল্যবান কোন কিছুর কথা বলা হয়, তখন সে সব জিনিস শুধু জ্ঞানের দিক থেকে নয়। বরং আর্থিক দিক থেকেও অনেকটাই মূল্যবান হয়ে থাকে।

মুল্যবান কিছু অবজেক্ট

যেমন বিজ্ঞানীদের কাছে খোঁজ পাওয়া একটি গ্রহ। যার নাম 55 ক্যাং ক্রি-ই। এই গ্রহটি সম্পূর্ণ হীরের তৈরি। আর এই গ্রহ আমাদের পৃথিবী থেকে ৮ গুন অধিক বিশাল। কিন্তু আপনি যদি এই গ্রহ থেকে হিরে আনতে চান, তাহলে এই সময়ে সম্ভব না। কারন পৃথিবী থেকে 40 lightyear’s দূরে আছে এই প্লানেট টি। এর মানে হল, আপনি যদি আলোর গতিতেও যাত্রা করতে পারেন, তবুও আপনাকে এই গ্রহতে পৌছাতে ৪০ বছর সময় লেগে যাবে। কিন্তু আপনি যদি ঐ গ্রহ থেকে হিরে নিয়ে আসেন, তাহলে পৃথিবীতে হিরের মূল্য খুবই কম হয়ে যাবে। আর এতটা দূরে গিয়ে পৃথিবীতে হিরে নিয়ে আসা বর্তমান সময়ে মোটেও সম্ভব নয়।

তো এখানে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমাদের সৌরমন্ডলে এমন আরও একটি মূল্যবান বস্তু রয়েছে। আর নাসা খুব তারাতারি এই মুল্যবান অবজেক্টের কাছে পৌছানোর জন্য একটি মিশন লঞ্চ করছে।

নাসা কি উদ্দেশ্যে এই অ্যাস্টরয়েড এর মধ্যে মিশন লঞ্চ করতে যাচ্ছে আজকের এই পোস্টে সে বিষয়ে আমরা জানব।

69সাইকি (অ্যাস্টরয়েড)

এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সের ছোট্ট একটি অংশ আমাদের এই সৌরমন্ডল। আর এই ছোট্ট একটু অংশ থেকেই আমরা অদ্ভুত কিছুর খোঁজ পাই। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাস্টরয়েড বেল্ট। যা আমাদের সোলার সিস্টেমের জুপিটার ও মার্চের মাঝে অবস্থিত আছে। এই অ্যাস্টরয়েড বেল্টে লাখের ও উপরে ছোট ছোট অ্যাস্টরয়েড মজুদ আছে।

মনে করা হয় আজ থেকে 4.6 বিলিয়ন বছর পূর্বে, জুপিটার ও মার্চের মধ্যে একটি গ্রহ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু জুপিটারের অত্যধিক আকর্ষণের কারণে, ঐ গ্রহটি তৈরি হতে পারেনি। আর তখন এই টুকরাগুলো, জুপিটার ও মার্চের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই টুকরোগুলোকে আজ আমরা অ্যাস্টরয়েড বেল্ট বলে থাকি।এই অ্যাস্টরয়েড বেল্ট এ মজুদ আছে, একটি মূল্যবান অ্যাস্টরয়েড। যার নাম 69 সাইকি। এই অ্যাস্টরয়েড এতটাই মূল্যবান যে, আপনি সেটা কল্পনা করে শেষ করতে পারবেন না। এই অ্যাস্টরয়েড টি অর্থ এবং জ্ঞান দুই দিক থেকেই মূল্যবান।

69সাইকি (অ্যাস্টরয়েড) এর সন্ধান

এই অ্যাস্টরয়েড টির খোজ একজন ইতালিয়ান এস্ট্রোনমার Annibale de Gasparis ১৭-ই মার্চ ১৮২ সালে করেছিল। এবং তিনি এই অ্যাস্টরয়েড এর নাম, গ্রীক এর পৌরাণিক আত্তার দেবতার নাম অনুসারে সাইকি রাখেন। যখন তিনি এটার খোঁজ পান, তখন হয়তো তিনি তা ভাবতেও পারেনি যে, তিনি কত বড় একটি মহত্ব পূর্ণ কাজ করেছেন। ইদানিং করা একটি অধ্যায়ন থেকে, একটি অবাক করা তথ্য সবার সামনে এসেছে। দুইশত কিলোমিটার ব্যাসের এই অবজেক্টটি খনিজ পদার্থে ভরা। এই অ্যাস্টরয়েড টিতে এখনো পর্যন্ত আয়রন, গোল্ড, নিকে্‌ কপার আর প্লাটিনাম এর মত মূল্যবান খনিজ এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। আর বলা হয়ে থাকে এই অ্যাস্টরয়েড এ মজুদ থাকা শুধুমাত্র আয়রনের মূল্যই 10000 কোয়াড্রিলিয়ন এর থেকেও বেশি হবে। এটা এতটাই বড় অংকের একটি অর্থ যে, যার সাহায্যে আপনি পৃথিবীর সব কিছু কিনতে পারবেন।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন যদি কোনভাবে এই অ্যাস্টরয়েড এর খনিজ সম্পদ গুলোকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয় , তাহলে পৃথিবীতে খনিজ সম্পদের আর কোন মূল্যই থাকবেনা। আর এই কারনেই অধিকাংশ মাইনিং কোম্পানি গুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এবং সেই সাথে খনিজ সম্পদের মূল্য কমে যাওয়ার জন্য, পৃথিবীর আর্থিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র আয়রনের মূল্যই যদি 10000 কোয়াড্রিলিয়ন হয়ে থাকে, তাহলে এই অ্যাস্টরয়েড এর বাকি সব খনিজ পদার্থের মূল্য একত্রিত করলে, সেটা এতটাই অধিক হবে যে তা আমাদের ভাবনার ও বাইরে।

প্লানেটারি কোর

এছাড়াও বিজ্ঞানীরা অধ্যায়ন করে জানতে পেরেছেন, এই অ্যাস্টরয়েডটি প্লানেটারি কোর। আর হয়তো এর জন্যই এর ভিতরে আয়রন নিকেল এর মাত্রা এতটাই বেশি। আর মূলত এই কারণেই নাসা এই অ্যাস্টরয়েড টির প্রতি এতটা গুরুত্ব দেখাচ্ছে। যার জন্য তারা একটি মিশন লঞ্চ করবে। যা 2030 এ এই অ্যাস্টরয়েড এ পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু নাসা তাদের মিশন কে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এখন সেটা 2026 এ লঞ্চ করা হবে।

নাসার বক্তব্য

নাসা বলেছেন নাসা এই মিশনটির সাহায্যে, এই অ্যাস্টরয়েড এ মজুদ থাকা রাসায়নিক অবজেক্ট এর অধ্যায়ন করবে। কিন্তু কিছু লোক মনে করতেছে, নাসা এই মিশনটি দ্বারা এই খনিজ ভান্ডারে তাদের দাবিকে প্রমান করতে চাইছে। নাসা এবং এরিজনা স্টেট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ আর্থ এন্ড আউটার স্পেস এর বিভিন্ন বিজ্ঞানী এটা বলেন যে, আমরা কোন সাধারণ অ্যাস্টরয়েড এর কথা বলতেছি না। এটা সম্পূর্ণ খনিজ দ্বারা তৈরি। আর এটাই একমাত্র মাধ্যম যার সাহায্যে আমরা কোন প্ল্যানেটের কোর বা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবো।এই অ্যাস্টরয়েডটি সম্পর্কে জেনে আমরা আমাদের পৃথিবীর কোরের সম্পর্কেও অনেক অজানা তথ্য পেতে পারি।

নাসা বর্তমানে এমন কোন প্ল্যান করেনি যে, এই অ্যাস্টরয়েড কে পৃথিবীতে আনার।কিন্তু ভবিষ্যতে স্পেসে মাইনিং অবশ্যই হবে। এছাড়াও এই অ্যাস্টরয়েড এর মধ্যে ওয়াটার হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি এটা সম্ভব হয়, তাহলে এই অ্যাস্টরয়েডকে মার্চের কলোনাইজ করার জন্য এবং মহাশূন্যে আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য, একটি স্টেশন এর মত ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আছে। আরে এই অ্যাস্টরয়েড জল থেকে, রকেটের জ্বালানি ও তৈরি করা যাবে।

যদি ভবিষ্যতে স্পেসে মাইনিং সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই অ্যাস্টরয়েড টি মানবজাতির খনিজ সম্পদের অভাব পূরণ করতে সক্ষম হবে।

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More