পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে পৃথিবী

ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে পৃথিবী পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস

ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেলে যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না ধীরে ধীরে মরে যায়। ঠিক তেমনি, পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বন পুড়ছে, তাহলে কি  পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি আমরা। চলুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর ফুসফুস  খ্যাত আমাজন বন পুড়ে যাওয়ার নেপথ্যে কি ঘটনা এবং কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত

চলছে দাবানল! পুড়ছে একের পর এক স্থান। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাজনের এই দাবানল এক অশনি সঙ্কেত! এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। এদিকে আমাজন বনাঞ্চলে চলতি বছরের রেকর্ড অগ্নিকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক সংকট বলে অভিহিত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো। বিষয়টি জি-৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন পরিবেশবিদসহ বিশ্লেষকরা।কি কারণে বছর বছর আমাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তা খতিয়ে দেখেছেন তারা।তারা বলছেন, আর কিছুই নয় অবৈধ উপায়ে নজিরবিহীনভাবে সোনার খনির খোঁজ করাই অ্যামাজনে আগুন লাগার পেছনে দায়ী।

আমাজনের ২৪৫টি এলাকায় ২ হাজার ৩১২টি অবৈধ খনি রয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামাজন সোশিও-এনভায়রনমেন্টাল।এসব খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনের লোভে ও এর বাণিজ্য বিস্তারে অ্যামাজন ঘিরে বেড়ে উঠেছে বহু সভ্য জনপদ। এভাবেই দিনে দিনে অবৈধ খনি বাণিজ্যের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে অ্যামাজনের গহিন অরণ্য।

এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায় ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের প্যারা স্টেটের ট্যাপাজোস নদীর তটজুড়ে শত শত কুঁড়েঘড় স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সোনার খনি খননের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা থাকছেন ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয় আইন ও দুর্বল প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া মূল্যের গুঞ্জনে আমাজনে এখন অবৈধ উপায়ে নজিরবিহীনভাবে সোনার খনির খোঁজ করছেন স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ।

হাজার হাজার অবৈধ খনির সন্ধানকারীরা সোনার খোঁজে খনন কাজ পরিচালনা করছেন।এ জন্য আদিবাসীদের জমি দখল করে অ্যামাজনের গাছ কেটে, নদী দূষণ করে এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে।এর জন্য ব্রাজিলের ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জার বোলসোনারো দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক রিপোর্টে প্রকাশ নির্বাচনের আগে সংরক্ষিত আদিবাসীদের এলাকায় খনি খনন কাজকে বৈধ করার কথা দিয়েছিলেন বোলসোনারো। তিনি খনি খনন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ আদিবাসীদের ভূমি আইনের মাধ্যমে উন্মুক্ত করে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। আরও বলা হয়, আশির দশকে একটি অবৈধ সোনার খনিতে কাজ করতেন বোলসোনারো নিজেই।

সে কারণে অবৈধ খনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তার। প্রেসিডেন্ট হতে তাদের সমর্থন কাজে লেগেছে তার। বোলসোনারো সরকারের সঙ্গে সোনার খনির সন্ধানকারীদের মিত্র সম্পর্ক রয়েছে।সম্প্রতি এক লাইভেও বোলসোনারো বলেন, আমি যতদূর উদ্বিগ্ন, তাতে যদি একজন আদিবাসী তার নিজের ভূমি থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করতে চান, তাহলে তিনি তা পারবেন।

ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যামাজন খনি ও তেল, গ্যাস উত্তোলনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া আগামী দুই দশকে এখানে বড় ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।এ ছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে করা এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে সরকার ও বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ করছে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা নির্মাণ, রেলপথ স্থাপন, বন্দর ও নৌপথ নির্মাণ। এ সব প্রকল্পের লক্ষ্য হল গভীর জঙ্গল এলাকায় মূল্যবান খনিজ, তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসসহ অন্যান্য সম্পদ উত্তোলন করা।এ সব করতে গিয়ে দ্রুত সাবাড় হচ্ছে বন, আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। দূষিত হয়ে পড়ছে বনের নদীগুলো। ট্যাপাজোস নদীর পানি কমলা বর্ণ ধারণ করেছে।

আমাজনের ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে দেশটির সংস্থা অ্যামাজ জিও রেফারেন্সড সোসিও-এনভায়রনমেন্টাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক। ব্রাজিল ভূখণ্ডাধীন চিরহরিৎ এই বনাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে সাড়ে ৪০০-এর বেশি অবৈধ খনি খনন স্থাপনা রয়েছে। ব্রাজিলের জাতীয় খনি সংস্থা দেশটির কংগ্রেসের কাছে হস্তান্তর করা এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বছরে অনন্ত ৩০ টন স্বর্ণ অবৈধভাবে কেনাবেচা হয় আমাজনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈধ উপায়ে অ্যামাজনের জঙ্গলে প্রতিবছর যে পরিমাণ স্বর্ণ কেনা-বেচা হয়, তার চেয়ে ছয় গুণ (এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার) বেশি হয় অবৈধভাবে। হাজার হাজার অবৈধ সোনার খনি খননে আমাজন বন উজাড় হচ্ছে, আগুন লাগছে বলে  অভিযোগ করছেন পরিবেশবিদরা তখন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জার বোলসোনারোর মুখে শোনা গেল ভিন্ন কথা।

 

Comments are closed.