পরমাণু বােমা বিজ্ঞানীদের এক মরণ যন্ত্র আবিষ্কার

পরমাণু বােমা এক মরণ যন্ত্র আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের

প্রতিটি পদার্থ অনু-পরমানু দিয়ে গঠিত  পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ হলো পরমাণু  বিজ্ঞানীরা এই পরমাণু নিয়ে বিশ্লেষণ করতে করতে পরমাণুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বিভিন্ন বোমা অস্ত্রে। মরণঘাতী আবিষ্কার এর জন্যই রয়েছে প্রচলিত অনেক কথা। চলুন জেনে নেয়া যাক ইতিহাস।

বিজ্ঞানী ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ওপেনহাইমারকে পরমাণু বােমা তৈরি করতে অনুরোধ করলেন। ওপেনহাইমার রাজি হলেন এ কাজ করতে। ওপেনহাইমোরের নেতৃত্বে আমেরিকার প্রধান প্রধান বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে গবেষণা করতে আগ্রহী হলেন।

ওপেনহাইমার এটম বোমা প্ৰস্তুত করা শুরু করলেন। গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ দু’শ কোটি ডলার। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই বােমা নির্মাণের কাজে পঁচাত্তর হাজার মানুষ যোগ দিলেন। ওপেনহাইমার গবেষণার কাজে অতুলনীয়। তাঁর যেমন প্রতিভা তেমনি কাজের প্রতি তিনি নিষ্ঠাবান।

তার অনুগামী বিজ্ঞানীরাও তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করছেন। ওপেন হাইমার ও তাঁর সহকারীরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তারা খাওয়া ও ঘুমের প্রতি উদাসীন। এইভাবে দিবা রাত্রি পরিশ্রমের ফলে তাদের শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ল। কিন্তু তখনও তারা সফলতার চূড়ায় উঠতে পারেন নি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি পরমাণু বোমা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে শিকাগো ও ওকারীজের কারখানাটি অন্যতম।

বিজ্ঞানীরা ইউরোনিয়াম ও প্লুটােনিয়াম নিয়ে ওই দুই কারখানায় বিভাজন প্রক্রিয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই রকম দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারের প্রবণতা বিশ্বের ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। কয়েক শত বৈজ্ঞানিকের তপস্যা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরূপ তাদের ঈপ্সিত ফলটি লাভ করলেন, সর্বশক্তিমান আয়ুধ পারমাণবিক বােমা। অর্থাৎ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের স্বপ্নের সম্পদ এটমবোমা।

ওপেনহাইমার প্রেসিডেন্টের হাতে বোমাটি তুলে দিলেন। এবার ভাবনার বিষয় হল, এটিকে কোথায় পরীক্ষা করা যাবে। মারণাস্ত্র হিসেবে এটি কতটা শক্তিশালী ও মারাত্মক হবে সেটা পরীক্ষা করতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে স্থির করা হল, নেস আলমাস নামক একটি পাহাড়ের মাথায় প্রথম এটম বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। 1945 সালের 17ই জুলাই তারিখে মানুষের ইতিহাসে এক মস্ত মাইলস্টোন।

সেদিন সমস্ত বিজ্ঞানীরা সমবেত হলেন নেস আলমাস পাহাড়টির সামনে, এক ঐতিহাসিক মারণযজ্ঞ দেখবেন বলে। সকলের সামনে বোমাটি ফাটানো হলো। সকলে ভয়ে কেঁপে উঠলেন। তাদের কল্পনার অতীত হয়েছে তাদের নির্মিত বোমাটি। এই মারণাস্ত্রটি কতটা বিধ্বংসী হতে পারে তা সম্পর্কে তাদের আর দ্বিমত নেই। এর আগুনের লেলিহান শিখা আকাশচুম্বী হয়েছে।

সেই আগুনের তাপে পাথরের পাহাড় গলে স্রোতধারায় পরিণত হয়েছে। রবার্ট ওপেনহাইমার ক্রুদ্ধ হলেন এই মারণাস্ত্রের বিধ্বংসী রূপ দেখে। তাঁর প্রতিবাদী মন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তিনি প্রতিবাদ করে উঠলেন। তিনি প্রতিবাদপত্র পাঠালেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে। তাঁর প্রতিবাদপত্রটি ছিল এই রকম — “প্রিয় প্রেসিডেন্ট, আপনার ইচ্ছানুযায়ী আমরা অর্থাৎ এ দেশের বিজ্ঞানীরা একনিষ্ঠ একাগ্রতায় বিগত দিনগুলিতে পরমাণু বোমা আবিষ্কারের সঙ্গে নিজেদের নিযুক্ত রেখেছি।

এই অস্ত্রটি যাতে হিটলার ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য এটি আমেরিকার হাতে আসা একান্তই প্রয়োজন, আপনি আমাদের একথা বলেছিলেন। এখন নাৎসীনায়ক এটম বোমার অধিকারী তো হতেই পারেন নি, বরং তিনি এখন বিধ্বস্ত। অন্যদিকে আমরা আপনারা হাতে বোমাটিকে তুলে দিতে পেরেছি।

বিগত 17 ই জুলাই আলমাস পাহাড়ের ওপর প্রথম এটম বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হল। আমরা সেই প্রলয়ঙ্কর দৃশ্যের প্রত্যক্ষদশী। ওই বােমার বিধ্বংসী ক্ষমতার কাছে পৃথিবীর যে কোন বিস্ফোরক দ্রব্যই নিতান্ত তুচ্ছ। আগুনের লেলিহান শিখা ভূতল ধ্বংস করে যেন জ্যোতিশ্চন্দ্ৰ স্পর্শ করেছিল সেদিন।

এ অস্ত্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে যদি একবার প্রয়োগ করা শুরু হয়, তাহলে কি অজস্র নিরপরাধ নরনারীর প্রাণ হরণ করা হবে, মানবিকতাকে পশুদের দ্বারা নির্মিত গারদে বন্দী করে রাখা হবে। এই কারণে এই বোমা আবিষ্কারকদের একজন হওয়ার গর্বের পরিবর্তে আমি এক ধরনের অপরাধবােধ অনুভব করছি।

আপনার কাছে তাই আমাদের সকলের অনুরোধ এই যে, পারমাণবিক বােমা নির্মাণ এখনই বন্ধ করুন এবং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হােক। ইতি আপনাদের অনুগত রবার্ট ওপেনহাইমার।”এভাবেই এগিয়ে যায় মানুষ ধ্বংস করার মরণ যন্ত্র আবিষ্কারের পথ।

Comments are closed.