প্লেটের পারস্পরিক সংঘর্ষই ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত

প্লেটের পারস্পরিক সংঘর্ষই ভূমিকম্পের প্রধান কারণ

আমাদের প্রতিনিয়ত কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প। এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। কিন্তু সবথেকে প্রকৃতিকে নিমিষেই বিপর্যয়কারী দুর্যোগ টির নাম হচ্ছে ভূমিকম্প।

যার কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই এই দুর্যোগ টি মুহূর্তেই লন্ডভন্ড করে দেয় পুরো প্রকৃতিকে। কিন্তু কেন এই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়? আর কিভাবে এই ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়ে থাকে? তার বিস্তারিত জানব আজকের আলোচনায়-

ভূপৃষ্ঠের কঠিন স্তরকে বলে লিথোস্ফিয়ার। এর দুটো অংশ যা দুই ভাগে বিভক্ত—সামুদ্রিক ও মহাদেশীয়। ভূ-অভ্যন্তরের ম্যান্টেল স্তরের ওপর ভাসমান থাকে, এই লিথোস্ফিয়ার। ম্যান্টেল অংশের তাপমাত্রা খুব বেশি। তাই সেই অংশের শিলাখণ্ড গলিত অবস্থায় থাকে।

গলিত শিলখণ্ডের মধ্যে একটি পরিচলন কোষের সৃষ্টি হয়। পরিচলন কোষের সান্দ্রতা বলের প্রভাবে সামুদ্রিক ও মহাদেশীয় লিথোস্ফিয়ার সঞ্চালনক্ষম হয়।

মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক পৃষ্ঠের যেসব খণ্ড ম্যান্টেলের ওপর পৃথকভাবে সঞ্চরণশীল থাকে, সেগুলোর প্রতিটিকে প্লেট বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীপৃষ্ঠের প্লেটগুলো সেগুলোর মতোই। লেখার শুরুতে কয়েকটা প্রাকৃতিক ঘটনার কথা বলা হয়েছে। মহাদেশীয় প্লেটের সঞ্চরণশীলতার সঙ্গে সেই সব ঘটনার সম্পর্ক কী?

প্রথমেই দেখা যাক, ভূমিকম্প কেন হয়। দুটি টেকটনিক প্লেটের পারস্পরিক সংঘর্ষই ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। প্লেটের সংঘর্ষের যেটির ঘনত্ব কম, সেটা অন্য প্লেটটার নিচে তলিয়ে যায়। এর ফলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয় এই ম্যান্টেল স্তরে। ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠে আসে।

অবশ্য এ ছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতে ভূমিকম্প হতে পারে। কিন্তু দুটি মহাদেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের সময় ঘটে অন্য ঘটনা। মহাদেশীয় প্লেটগুলোর ঘনত্ব কাছাকাছি। তাই এরা কেউ কারও নিচে তলিয়ে যায় না; বরং সংঘর্ষের ফলে সেখানকার ভূস্তর উঁচু হয়ে পর্বতমালার জন্ম দিতে পারে।

এসবই শুধু নয়, প্রকৃতপক্ষে ভূতত্ত্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যা করা যায় টেকটনিক তত্ত্বের সাহায্যে। যেমন শিলার সৃষ্টি, শিলাচক্র ইত্যাদির পেছনে এই প্লেটসমূহের সঞ্চরণই মূল ভূমিকা পালন করে। এটি ভূতত্ত্ববিদ্যার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত নীতি।

আরও বড় প্রশ্ন এই প্লেট টেকটনিকের সংঘর্ষের ফলে যে ভূমিকম্প হয়, তা বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে বাংলাদেশ গুরুতর ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। বাংলাদেশের বেশির ভাগ অংশ ইন্ডিয়ান প্লেটে এবং কিছু অংশ পাশের বার্মিজ প্লেটে অবস্থিত।

বাংলাদেশ ইউরাসিয়ান, ইন্ডিয়ান ও বার্মিজ প্লেটের সীমানায় অবস্থিত। এ ছাড়া ডাউকি ফল্ট বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। বলে রাখা ভালো, দুটি প্লেটের সঞ্চালনের কারণে প্লেটের সীমানায় শিলাস্তর পরস্পর থেকে বিচ্যুত হয়। এ বিষয়টিকেই ফল্ট বলে। ফল্ট বরাবর শিলাস্তরের নড়াচড়া ভূমিকম্পের প্রবল শক্তির জোগান দেয়।

ইন্ডিয়ান প্লেট ইউরাসিয়ান প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করছে। আর বার্মিজ প্লেট ইন্ডিয়ান প্লেটকে ধাক্কা দিচ্ছে। এ ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম। এখানকার ঘনবসতি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

 

You might also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More