রবার্ট ওপেনহাইমার এর পতনের কারণ-
রবার্ট ওপেনহাইমার এর পতনের কারণ
এক পারমাণবিক বোমা দিয়ে রবার্ট ওপেনহাইমার যেখানে সফলতার শীর্ষে আরোহণ করলেন, তখন কে জানতো আরেক প্রলয়ংকারী বোমাই তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পারমাণবিক বোমার কারণে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বিশ্বযুদ্ধের ইতি টানলে বহু মার্কিনির নিকট ওপেনহাইমার এক নায়কের নাম হয়ে দাঁড়ায়।
তার বোমার কারণে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই তার আপনজনকে কাছে ফিরে পেয়েছিলো। দেখতে দেখতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। সবাই যার যার জীবনে ফিরে যায়। রবার্ট ওপেনহাইমারকে সরকার পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়।
তিনি সর্বদা ভয় পেতেন, অন্য কোনো রাষ্ট্র এই পারমাণবিক বোমা তৈরি করে অন্ধ স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। এই দুশ্চিন্তা তাকে ভেতর থেকে যন্ত্রণা দিচ্ছিলো। ১৯৪৯ সালে স্ট্যালিন কর্তৃক সোভিয়েত ইউনিয়নের সফল পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের ঘোষণা আসলে ফের মার্কিন মুলুকে আতঙ্কের ছায়া দেখা দেয়।
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান সোভিয়েত তৎপরতায় কমিশনের বিজ্ঞানীদের সাথে গোপন বৈঠকে বসলেন। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কি সোভিয়েতের সাথে সমঝোতায় বসবে, নাকি হাজার পারমাণবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা নির্মাণের কাজ শুরু করবে?
- Advertisements -
কমিশনের বিজ্ঞানীরা সবাই বোমা নির্মাণের বিপক্ষে রায় দেন। বিজ্ঞানীদের এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির মনঃপুত হলো না। তিনি এর পেছনে সভাপতি রবার্টকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সরকারের কর্মকাণ্ডে হতবাক হয়ে যান তিনি। চার বছর তদন্ত চলার পর প্রতিবেদনে জানানো হয়, পূর্বে রবার্ট ওপেনহাইমারের সাথে কম্যুনিস্টদের আঁতাত ছিল।
তাই তার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রবিরোধী ছিল। তৎক্ষণাৎ পারমাণবিক গবেষণাগারে প্রবেশের সকল অনুমতি থেকে তাকে বঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। দেশের নায়ক থেকে এক ধাক্কায় খলনায়ক বনে যান এই বিজ্ঞানী। পরবর্তী এক দশক বঞ্চনার শিকার হন তিনি।
১৯৬৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রবার্টের সাথে করা পূর্ব সরকারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং তাকে সম্মানজনক এনরিকো ফার্মি পুরষ্কারে ভূষিত করেন।
শেষ জীবনে তিনি টুকটাক রাজনীতি করেছিলেন। প্রিন্সটনে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক এক প্রতিষ্ঠানে তিনি পরিচালক হিসেবে বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জীবনে তিনি সর্বদা পারমাণবিক বোমা বিরোধী বক্তব্য দিয়ে গেছেন।
নিজের সন্তানে বিতৃষ্ণ এই জনক ১৯৬৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরই মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতির এক শক্তিশালী হাতিয়ার উদ্ভাবকের জীবনের যবনিকাপাত হয়।
- Advertisements -